রাবির ১৭ হলে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ৪১৬ জন
ক্যাম্পাসের পথে পথে ব্যানার-ফেস্টুন। সকাল বিকেল মিছিল-মিটিং। সন্ধ্যায় চা-আড্ডা ও দলীয় নেতাকর্মীদের জয় বাংলা স্লোগানে মুখর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আসন্ন ১৪ মার্চ হল সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এর আগে, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ২২ নভেম্বর দুই ভাগে ভাগ করে ছাত্রদের ১১টি হলের সম্মেলন করে তৎকালীন রানা-বিপ্লব কমিটি। পরে বিভিন্ন সময়ে ৯টি হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঝুলিয়ে রাখা হয় শের-ই-বাংলা ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখার কমিটি। এরপর থেকে আর হল কমিটি হয়নি।
তাছাড়া ২০১৭ সালে শাখা ছাত্রলীগ ২৫১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর পার হলেও নতুন কমিটি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়েছেন দলের ২৩০ জন নেতাকর্মী। ফলে হতাশা ও নেতৃত্বের অভাবে ঝিমিয়ে পড়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পরও যারা পদ-পদবি থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তাদের সামনে নেতা হওয়ার এক অপার সুযোগ। তাই সম্মেলন উপলক্ষে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
হলের নতুন দায়িত্বে কে আসছে এ নিয়ে শুরু হয়েছে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও নেতাকর্মীদের নানা জল্পনা-কল্পনা। ব্যানার-ফেস্টুন ও মিছিল-মিটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা। রুটিন করে দলীয় টেন্টে বেড়েছে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে এক উৎসবমুখর পরিবেশে বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন ৪১৬ জন ছাত্রলীগ কর্মী। এরমধ্যে হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৪০ জন, মাদার বখশ হলে ৩১ জন, শহিদ হবিবুর রহমান হলে ৩৭ জন, জিয়াউর রহমান হলে ২৮ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৪২ জন, শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক হলে ৩০ জন, মতিহার হলে ২২ জন, শাহ মখদুম হলে ৩৪ জন, সৈয়দ আমীর আলী হলে ২৮ জন, লতিফ হলে ২৬ জন ও জোহা হলে ২৫ জন।
আরও পড়ুন- ‘ছাত্রলীগ না করায়’ শিক্ষার্থীকে মারধর: তদন্ত প্রতিবেদন জমা
মেয়দের হল থেকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২২ জন, মন্নুজান হলে ১৭ জন, তাপসী রাবেয়া হলে ৭ জন, রহমতুন্নেসা হলে ৮ জন ও খালেদা জিয়া হলে ৯ জন পদপ্রত্যাশী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন।
দীর্ঘ বিরতি শেষে অবশেষে হল সম্মেলনে তারিখ ঘোষিত হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করে সোহরাওয়ার্দী হলের হলের সভাপতি পদ-প্রত্যাশী মাজহারুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা বিকাশের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠুক এমনটাই প্রত্যাশা। যে নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাহসী অভিযাত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। নতুন কমিটিতে এমন নেতৃত্বই ওঠে আসুক সর্বদা এটাই চাই বলে জানান এই পদ-প্রত্যাশী কর্মী।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সভাপতি পদপ্রত্যাশী তাজরীন আহমেদ খান মেধা বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর পর হল সম্মেলন হতে চলেছে তাই আমরা সত্যিই অনেক আনন্দিত। যারা পরিশ্রমী, ত্যাগী, ক্যাম্পাস রাজনীতিতে যারা দীর্ঘদিন সক্রিয় থেকেছে এবং নেতৃত্বে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যারা প্রকৃত অর্থে ধারণ ও লালন করে তারাই যেন পরবর্তী নেতৃত্বে আসেন এমন প্রত্যাশা করেন এই নেত্রী।
রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জানান, ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি হল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত সেই সময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তবে সম্মেলনের জন্য প্রত্যেক হলের সকল পদপ্রত্যাশীদের ১৮ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও উপ-দপ্তর সম্পাদক বরাবর জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হলে ১৭টি আবাসিক হলে মোট ৪১৬ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে।
তিনি বলেন, ‘জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার অনেকদিন হয়েছে। জীবনবৃত্তান্তগুলো আমরা ভালোভাবে পর্যালোচনা করেছি। যারা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছে, তারা সকলেই আমাদের পরিচিত। তাই ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয়তা, পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের সংযুক্তির পাশাপাশি মেধা, যোগ্যতা ও সকলের নিকট অধিক গ্রহণযোগ্য কর্মীরাই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রধিকার পাবে বলে জানান এই ছাত্রলীগ নেতা।