শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন
শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ দ্রুত তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আজ রবিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচিতে এ আহবান জানানো হয়।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীন সিকদারের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন। আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, ভাস্কর শিল্পী রাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. তৌহিদুল ইসলাম মাহিমসহ প্রমুখ।
কর্মসূচিতে সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম-অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
“সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খোদ চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ কর্তৃক ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে দুর্নীতির এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের নামে সরকারের ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।”
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীন সিকদার বলেন, তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত দাগের ভূমি হস্তান্তর ছিল উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ টাকা। একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নিকট আহবান, আপনি দ্রুত আপনার ভাইদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রমাণ করুন যে, আপনার মন্ত্রণালয় কোন দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়না। অন্যথায় তদন্ত কাজ প্রভাবমুক্ত থাকার জন্য আপনাকে পদত্যাগ করার আহবান জানাচ্ছি।
ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, বর্তমান সরকারের সফল অর্জনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য দুর্নীতিবাজদের নানাবিধ ষড়যন্ত্র চলছে। এরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, দুদক একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের নিকট আহবান, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনগণের টাকা লুটকারী দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এরা সমাজের বড় অভিশাপ। রাষ্ট্র বিচার না করলে জনগণই দুর্নীতিবাজদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা শুরু করবে। প্রয়োজনে দুর্নীতিবাজদের ছবি রাস্তার মোড়ে মোড়ে টানানো হবে এবং এসব ছবিতে ঘৃণা প্রদর্শন করা হবে।
“শিক্ষামন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতি অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দুদক কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অবিলম্বে দুদককে তদন্ত করতে হবে।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, সরকারকে অবশ্যই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে দুর্নীতিবাজদের বিচারের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। কেউ আইনের উর্ধে নয়।
“শিক্ষামন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে সরকারের নিকট আহবান, আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীকে অপসারণ করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় দুর্নীতি দমন কমিশন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রাসহ দেশব্যাপী আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”