অধিকাংশই চায় সম্মেলন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা
৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রলীগ। আজ বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হবেন তিনি।
২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের দেড় মাস পর ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। কিন্তু তারা মেয়াদের পুরো সময় শেষ করতে পারেন নি। নানা বিতর্কে জড়িয়ে পদত্যাগে বাধ্য হন এই দুই নেতা। নেতৃত্ব সঙ্কট এড়াতে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরের বছর ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন- বিদেশি শিক্ষার্থী প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
এদিকে চার বছর ধরে সম্মেলন হচ্ছে না ছাত্রলীগের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। মেয়াদের বেশি সময় দায়িত্বে থাকায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছেন। আজকের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে সম্মেলন নিয়ে দিক নির্দেশনা আসতে পারে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।
‘৯০ এর দশকের পর ছাত্রলীগের প্রায় সব কমিটিই চার বছর পার করেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ দুই বছর। নির্ধারিত সময়ে কমিটি না হওয়ায় অনেক যোগ্য প্রার্থী সংগঠনের দায়িত্বে আসতে পারেন না বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে আওয়ামী লীগেও।
জয়-লেখককে দায়িত্ব দেয়ার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ-নেতারা আশা করেছিলেন ছাত্রলীগ সুনামের ধারায় ফিরবে। কিন্তু তারাও শোভন-রাব্বানীর দেখানো পথেই হেঁটেছেন। কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতাদের সাথে সমন্বয়হীনতা, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা, বিলাসী জীবন, কমিটি বাণিজ্য নিয়ে এবারও সমালোচিত হয়েছেন তারা। কেন্দ্রীয় নেতারা প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেন শীর্ষ দুই নেতার। লেখালেখি করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
আরও পড়ুন- নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম
১২১টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে মাত্র ২৬টিতে কমিটি গঠন করতে পেরেছেন জয়-লেখক। অধিকাংশ কমিটিই দিয়েছেন প্রেস রিলিজে। এসব কমিটিতে বাণিজ্য হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতাকর্মীরা। জেলা ও মহানগর কমিটি প্রকাশের পর ব্যাপক বিক্ষোভ হয় সিলেটে। সাবেক জেলা সভাপতি দাবি করেন মোটা অংকের টাকা লেনদেন করে কমিটি দিয়েছে জয়-লেখক।
দায়িত্ব পাওয়ার পর এখনো কোনো বর্ধিত সভা করেনি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষেও কোনো প্রস্তুতি সভা করেনি তারা। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে উদযাপন কমিটি গঠন করা হলেও এবার সেটিও হয়নি। গতকাল আনন্দ শোভাযাত্রার শুরুতে অপরাজেয় বাংলায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে লেখক ভট্টাচার্য আহত হন। নেতাকর্মীরা বলছেন, উদযাপন কমিটি করে সবাইকে দায়িত্ব বণ্টন করে দিলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতো না।
প্রায় পাঁচ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি হচ্ছে না। এতে অনেকে হতাশ হয়ে রাজনীতি বিমুখ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির অভিযোগ কেন্দ্রের কারণেই তারা হল কমিটি দিতে পারছেন না।
নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন না হওয়ায় এমন সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা। কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সোহান খান বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠন পরিচালনা করা হচ্ছে না। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের ইচ্ছা মতো নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নেতার সাথেই তারা আলোচনা করেন না। প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি দেন। বেশ কয়েকটি কমিটিতে অর্থ লেনদেনের কথাও শোনা গেছে। সংশ্লিষ্ট শাখা আন্দোলন করেছে। নিয়মিত সম্মেলন হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বৈরাচারী হতে পারতেন না। সংগঠনেরও গতি আসতো। তাই আমরা আশা করছি অতিদ্রুত সম্মেলনের ঘোষণা আসবে।
আরও পড়ুন- বুস্টার ডোজ প্রদানে অগ্রাধিকার চেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরেক সহ সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, ছাত্রলীগ প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। সম্মেলনের দাবি উঠেছে নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতি কমিটি বা সভা না করার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) মধ্যে আসলে একটি ভয় ঢুকে গেছে যে, তারা যদি এরকম সকলকে নিয়ে আলোচনায় বসে তাহলে সম্মেলন নিয়ে কথা হবে এবং তাদের বা কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ নিয়ে কথা তুলবে নেতাকর্মীরা। মূলত, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যাতে দীর্ঘদিন তাদের পদে আসীন থাকতে পারেন, তাদের মেয়াদ নিয়ে যাতে সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ না হতে হয় তা এড়ানোর জন্যই সাধারণ সভা করা হয়নি।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। তিনি বলেন, করোনার কারণে আমরা এক বছর স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারিনি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা দ্রুত বাকি কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবসময় প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন চাইবেন তখনই সম্মেলন হবে।