গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের ৫ নেতা
গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও প্রকাশ্যে ঘুরছেন কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা। সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পাশপাশি শীর্ষ নেতাদের সাথে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন আসামিরা। থাকছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও।
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস ফাল্গুনী দাস তন্বীকে মারধরের ঘটনায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দুই নেত্রীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চলতি মাসের ১৪ ডিসেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
আরও পড়ুন- কনসার্টে শেকৃবি ছাত্রলীগ নেত্রীকে মারধর
গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সভাপতি বেনজীর হোসেন নিশি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ জালাল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সংস্কৃতিবিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ তানসেন এবং সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. এনামুল হক। তারা সবাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারি।
পরোয়ানা জারির পর আসামিদের ছাত্রলীগের কর্মসূচিগুলোতে নিয়মিত অংশ নিতে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের বিজয় র্যালীতেও অংশ নিয়েছেন তারা। এক অনুষ্ঠানে দেখা যায়, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন নিশি। মধুর ক্যান্টিনে নেতাকর্মীদের সাথে আড্ডা দিতেও দেখা যায় তাদের। এছাড়া, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের বাসায় গিয়ে ছবি তুলে সে ছবি পরে ফেসবুকেও প্রচার করছেন আসামিরা।
এ নিয়ে মামলার বাদী ছাত্রলীগের আরেক নেত্রী ফাল্গুনী দাস হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাধ্য হয়ে আদালত পর্যন্ত গিয়েছি। কিন্তু আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। সেটা দেখেই হতাশ হচ্ছি।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের অনেক নেতা। তাদের দাবি, সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের উদাসীনতা ও একগুয়েমির কারণেই ঘটনা এতো বড় হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেন, তোমাদের নিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন অনেক। কোনটা রেখে কোনটা বলবো বলো। থাক, আজকে কেবল তন্বীর ঘটনার কথাই বলি। আচ্ছা, তোমরা কি অস্বীকার করতে পারো তন্বী আমাদের ছোট বোন নন। এবং বেনজির, শান্তা ও এই সংগঠের বাইরের কেউ? যদি সেটিই হয় তাহলে প্রেস দিয়ে বলে দিলেই পারতে। ধরে নিলাম ঘটনাটা অপ্রত্যাশিত ভাবে ঘটে গেছে। সেখানে হয়তো একপক্ষ অথবা দুই পক্ষেরই দায় ছিলো। তারা না হয় ভুল একটা করেই ফেলেছে। কিন্তু এই ভুলের মিমাংসা করার দায়িত্ব তো তোমাদেরই ছিলো। কেন করলে না বলতে পারবে? কেন থানা এবং আদালত পর্যন্ত গড়াতে হলো। অথচ আমরা একটা কথা শুনেছি। কিন্তু সেটা আমরা মানতে চাই না। আমরা শুনেছি একজনের লোক বলে আরেকজন মিমাংসা না চেয়ে শাস্তি চেয়েছো। সংগঠনের না ভেবে এর লোক ওর লোক ভাবা এটা কোন কথা হতে পারে। সংগঠনে ব্যক্তি স্বার্থ, রাজনৈতিক স্বার্থ আগে নিয়ে এলে! এটা ভাবতেই কষ্ট হয়, বড় কষ্ট হয়।
আরেক সহ সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ হোসাইন লিখেন, রোকেয়া হলের নির্বাচিত সাবেক এজিএস এবং হল ছাত্রলীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী তন্বীর দায়ের করা মামলায় দুজন নারী নেত্রীসহ ছাত্রলীগের পাঁচজন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলো আদালত। অথচ, মেয়েটা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কাছে মীমাংসার জন্য বারবার তাগাদা দিলেও তারা আমলে নেয় নি। তারা দুজন দায়িত্ব নিয়ে মিমাংসা করলে ঘটনা নিশ্চিত এতদূরে গড়াতো না।
এদিকে আসামিদের সাথে যোগাযোগ করা হয়ে তারা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন। সহ সভাপতি জিয়াসমিন শান্তা বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আগের দিনই আমরা স্থায়ী জামিন নিয়েছি। স্থায়ী জামিন নেয়ার ডকুমেন্ট দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে রাজি হননি। তবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশি বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ১৯ তারিখ তারা জামিন নিয়েছেন। তিনিও জামিনের কাগজ দেখাতে রাজি হননি। আর পরোয়ানা জারির পর কর্মসূচিগুলোতে অংশ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। ছবি থাকার কথা জানালে তিনি বলেন, ভালো করে খোঁজ নেন। জিয়াসমিন শান্তা বলেন, কীভাবে কর্মসূচিগুলোতে থাকি বুঝেন না?
আরেক আসামি ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ জালাল বলেন, আমি এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। আমি এটার সাথে জড়িত ছিলাম না। জামিনের বিষয়েও তিনি কিছু বলতে পারেন নি।
তবে মামলার আইনজীবী জাহিদ আল ভুঁইয়া বলেন, এগুলো সত্য নয়। তারা কেউ এখনো জামিন নেয়নি। আগাম জামিন বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সম্ভব না। মামলা ইস্যু হওয়ার আগে জামিন নেয়ার কোন নিয়ম আইনে নেই।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুদ হাওলাদার বলেন, এই মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো থানায় আসেনি। হয়তো দুই একদিনের মধ্যে চলে আসবে।
আরও পড়ুন- ভর্তিচ্ছুদের সব ধরণের সহযোগিতা করবে ঢাবি ছাত্রলীগ
আসামিদের ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে উপস্থিতির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে গ্রেফতারি পরোয়ানার কেউ থাকে না। ওরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে থাকে। বিজয় র্যালির প্রোগ্রামে আসামিদের দেখা গেছে জানালে তিনি বলেন, বিজয় র্যালির প্রোগ্রাম আমি করি নাই। এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বারবার কল দিলেও রিসিভ করেন নি তারা।
আসামিদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।