রায় দ্রুত কার্যকর ও গেস্টরুম বিরোধী আইন পাশের দাবিতে বিক্ষোভ
বুয়েট আবরার হত্যার রায় দ্রুত কার্যকর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে গেস্টরুম বিরোধী আইন পাশের দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা আবরার হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর এবং ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। আজ বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, ছাত্রলীগ ছাত্ররাজনীতির বিষবাষ্পে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, আবরার যেমন আমাদের ভাই, তেমনি যারা আবরারকে হত্যা করার জন্য মৃত্যুদন্ড পেলো তারাও আমাদের ভাই। তাহলে প্রশ্ন জাগে তারা কিভাবে সন্ত্রাসী দানবে পরিণত হলো? আর দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদ দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলার জন্য, দেশের পানি ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে কথা বলার জন্য কিভাবে তারা তাকে হত্যা করলো।
আবরার হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি অমিত শাহের মায়ের এক উদ্ধৃতি ধরে বলেন, অমিত শাহের মা বলেছে, আমি যদি জানতাম সে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে, এগুলো করে, তাকে দুই গালে জুতা মারতাম। ছাত্রলীগ এমন একটা মেশিন, যেখানে যে কেউ ঢুকলে সন্ত্রাসী হয়ে বের হয়। একসময়ের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের আজকের এই অবস্থা। এখনই ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের ডাক এসেছে। ছাত্রলীগ ছাত্রদের পাশে না থেকে ছাত্রদের জুলুম নির্যাতন করলে, খুন করলে, ছাত্ররা আর সন্ত্রাসীদের সাথে থাকবে না৷ এন এস এফের মতো বিলীন হয়ে যাবে।
সকল শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনাদেরকে সচেতন হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আপনার আদরের সন্তানটি কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যুক্ত হচ্ছে কি না। ছাত্রলীগ কেবল ছাত্রদের রক্ত চুষেই ক্ষান্ত হয় নি বরং শিক্ষকদেরও ছাড়ে না। কুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিমকে ছাত্রলীগ মেরে ফেললো। শিক্ষকরা বলছে ছাত্ররাজনীতি নাকি বন্ধ করতে হবে। এটা কোন দূরদর্শী চিন্তা নয়। এটা তো মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চক্রান্ত। শিক্ষকরা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি এর জন্য দায়ী নয়? তারা ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয় দেয় বলেই আজ তাদেরও খুন হতে হয়। এর দায় যারা খুন করেছে তাদের আর যে শিক্ষকরা তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের। পারলে এই খুনিদের নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেন। এর দায় কখনোই পুরো ছাত্র রাজনীতির নয়।
তিনি আরও বলেন, বুয়েটে কিন্তু ছাত্রলীগ এখনো রাজনীতি করছে। রাজনীতি একটা প্রকৃতিগত বিষয়। চাইলেই বন্ধ রাখা যায় না। বরং এই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করেন তাহলে কার্যকর কিছু হবে। কখনো কোথাও শূন্যস্থান থাকে না। তাই এই অশুভ দানবীয় শক্তির মোকাবিলা করতে একটি শুভ শক্তিকে দাঁড় করাতে হবে। আমরা ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকদের বলবো যে ছাত্র অধিকার পরিষদ সেই শুভ শক্তি। আপনারা ছাত্র অধিকার পরিষদকে এই অশুভশক্তিকে মোকাবিলা করতে শক্তিশালী করুন।
ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আপনারা ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, ডাকসু নির্বাচন কেন দিচ্ছেন না? নির্বাচন দিলে, ক্যাম্পাসগুলোতে অন্তত ছাত্র লনেতারা চিন্তা করে যে, ভোট পেতে হলেও ছাত্রদের জন্য কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বুয়েটের ছাত্র আবরারের হত্যাকারীদের শাস্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। গেস্টরুম-গণরুমে নির্যাতন বিরোধী আইন প্রণয়ন করতে হবে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আবরারের হত্যা মামলার রায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। একইসাথে হলের দায়িত্বরত শিক্ষকদের দায়িত্বের অবহেলার জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলের দায়িত্ব থাকে শিক্ষকরা কিন্তু তারা তাদের শিক্ষক রাজনীতি, পদ-পজিশন, সরকারের প্রিয়ভাজন হওয়ার জন্য ক্ষমতাশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বের হাতে ছেড়ে দেয়। ফলে, হলগুলো হয়ে উঠে নির্যাতিত নিপীড়নের আস্তানা। তিনি বলেন, একই সাথে ক্যাম্পাসে নির্যাতন বিরোধী আইন প্রণয়ন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, আজকের এই রায় বাংলাদেশ ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশ জনগণের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে যারাই আঙুল তুলবে তাদের আবরারের খুনিদের পরিণতি ভোগ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস যারা কায়েম করে তাদের রুখে দিয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে হবে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাকিল মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্যা রহমতুল্লাহ, সহ-সভাপতি সোহেল মৃধা, নাহিদ উদ্দিন, রেদোয়ান উল্লাহ, ও ফরহাদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান ও জহির ফয়সাল এবং দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ প্রমুখ।