০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:৩৯

আবরার হত্যা মামলার রায়: পাঁচ প্রশ্নের উত্তর চাইলেন রাব্বানী

গোলাম রাব্বানী  © ফাইল ছবি

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে।

দুই বছরের বেশি সময়ের পর আজ বুধবার আলোচিত এই হত্যা মামলায় ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর পাশাপাশি যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এই রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে মিডিয়া ও পাবলিক ট্রায়ালের চরম নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে দাবি করে আক্ষরিক অর্থেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন বলে আশা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর।

আজ রাতে রাব্বানী তার ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডির এক স্ট্যাটাসে তিনি এ আশা প্রকাশ করে বলেন, সঙ্গত কারণেই কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, কারো সৎ সাহস থাকলে গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক উত্তর আশা করছি। নিচে তার স্ট্যাটাসটি হুবহু ‍তুলে ধরা হলো-

“আবরার হত্যা মামলার রায়- এই মামলার রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে মিডিয়া ও পাবলিক ট্রায়ালের চরম নেতিবাচক প্রভাব, প্রি-ডিটারমিনেশন ছাড়া সাডেন প্রভোকেশনে একজনের মৃত্যুতে ২০ জনর ফাঁসি, ৫ জনের যাবজ্জীবন ঠিক কতটুকু ন্যায়সঙ্গত, আসামী পক্ষের আইনজীবীদের কোন যুক্ততর্ক আমলে না নেয়ার অভিযোগ প্রভৃতি নানা 'প্রাসঙ্গিক কিন্তু উপেক্ষিত বিচার্য বিষয়' মহামান্য হাইকোর্ট আসামী পক্ষের আপীল পরবর্তী শুনানিতে নিশ্চয়ই সেগুলো আমলে নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।

একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, আবরার হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত বুয়েটের (অর্থাৎ সরকারের) ৫৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিসি মহোদয়। সঙ্গত কারণেই কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন-কারো সৎ সাহস থাকলে গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক উত্তর আশা করছি-

১) বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার সনি ও আরিফ রায়হান দ্বীপের মামলা পরিচালনায় বুয়েট কর্তৃপক্ষ তথা রাষ্ট্রযন্ত্র ঠিক টাকা ব্যয় করেছে?

২) বুয়েট থেকে আবরারের পরিবারকে মাসিক ৭৫ হাজার টাকা খরচ দিচ্ছে, যা এক যুগ ধরে দেয়া হবে, তাহলে বিগত ২০ বছর সনি ও ৮ বছর যাবত দ্বীপের পরিবার মাসিক কত টাকা করে পেয়েছে? না পেয়ে থাকলে শিক্ষার্থী ভেদে কেন এমন বিমাতাসুলভ আচরণ বুয়েট কর্তৃপক্ষের?

৩) মাত্র দুই বছরে আবরার পরিবার বিচার পেলে সনি ও দ্বীপের হতভাগ্য বাবা-মায়ের দোষ কোথায়? কেন ২০ এবং ৮ বছরেও বিচারকার্য শেষ হয় নাই? এরমানে কি তাহলে, সনি বা দ্বীপ ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের না হয়ে ভিন্নমতাবলম্বী হলে অনেক আগেই বিচারকার্য শেষ হতো?

৪) যেকোনো ক্রিমিনাল অফেন্সকে ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ বিবেচনা করা হয়। তাহলে রাষ্ট্রপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীগণকে রাষ্ট্র কাঠামো নির্ধারিত বেতনের বাইরেও কি মামলা পরিচালনার জন্য বুয়েট কর্তৃপক্ষের নিকট হতে আলাদা খরচ দেয়া হয়েছে বা তাঁরা কি তেমনটা দাবী করেছেন?

৫) বাংলাদেশের ঠিক কতভাগ মানুষের দুই বছরে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় করে মামলা পরিচালনার সামর্থ্য রয়েছে? যাদের ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ের সামর্থ্যও নেই, তাদের মামলা পরিচালনা ও ন্যায় বিচার কিভাবে নিশ্চিত হবে?

তাদের বেলায় কি বিচারের বাণী কেবল নিভৃতে কাঁদবে আর অসহায় স্বজনরা আহাজারি করবে, তাদের বেলাতেও কেন মিডিয়া/পাবলিক ট্রায়াল হলো না?”