০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:০৪

চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুই ছাত্রনেতার ভিন্ন মত

ডা. মনীষা চক্রবর্তী ও সাদ্দাম হোসেন  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্বচ্ছ বলে দাবি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনের। তবে সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীনদের প্রভাব আছে বলে মনে করেন বাসদ-এর ডা. মনীষা চক্রবর্তী।

শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) ডয়চে ভেলে বাংলার ইউটিউব টকশোতে যোগ দেন এই দুই তরুণ নেতা। শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন, রাজনীতি, অধিকার ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেখানে তারা কথা বলেছেন।

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের মতে, বাংলাদেশে বর্তমান সরকারে অধীনে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া তা সাম্প্রতিক যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।

তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে ধরনের স্বচ্ছতা এসেছে এটি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো দশকে হয়েছে বলে তরুণেরা বিশ্বাস করে না। সরকারি কাজের সুযোগ যেমন তাদের বৃদ্ধি পেয়েছে, আজকে দেখুন বিএসএস এর প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বলুন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় বলুন, মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের যে আগ্রহ এটির কারণ স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ করার কারণে কোন ধরনের রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার উদাহরণ কিন্তু নেই।

তার দাবি, বিসিএস থেকে শুরু করে কোন ধরনের সরকারি চাকরির প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এখন ন্যূনতম কোন সুযোগ নেই। কর্পোরেট চাকরির বদলে শিক্ষার্থীদের এখন বিসিএসে আগ্রহী হওয়ার এটিই প্রধান কারণ বলে মনে করেন এই ছাত্রনেতা।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আছে। এ প্রসঙ্গে সাদ্দাম বলেন, ‘‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে।’’ তবে সেক্ষেত্রে সরকার দায়ীদের গ্রেপ্তারসহ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও মত তার।

সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সাদ্দাম যে স্বচ্ছতার কথা বলছেন তার সঙ্গে একমত নন বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘চাকরি বলতে শুধু বিসিএস কে বোঝায় না। সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীনদের প্রভাব বিস্তার দৃশ্যমান।’

উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক উদাহরণ আছে যে অনেক ভালো সিজিপিএ থাকার পরও কেউ শিক্ষক হতে পারছেন না। কিন্তু অনেক পেছনের দিকে থাকার পরও বিশেষ কোটায় তারা শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা পত্রপত্রিকায় প্রতিনিয়তই আসছে।''

তার মতে, স্বচ্ছতা নয় বরং বেকারত্বের প্রকটতা ও চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বিসিএসের প্রতি ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সঙ্গে কর্পোরেটসহ বেসরকারি খাতে শ্রম আইনের বাস্তবায়ন কম হওয়ার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।

অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে, সাদ্দাম দাবি করেন বাসে অর্ধেক ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ তাদের পাশে ছিল। যদিও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্র সংগঠনটির কর্মীরা হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সংগঠন হিসেবে ভুল ত্রুটি থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ হল দখলের রাজনীতি করে না বলে দাবি করেন সাদ্দাম।

অন্যদিকে ডা. মনীষা বলেন, প্রগতিশীল, বামপন্থি দলগুলোই বরাবর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে থাকে। সাম্প্রতিক শিক্ষার্থীদের ‘স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনে’ তারা পাশে ছিলেন।

এইসব আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ঢাকা শহরে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ভাড়া অর্ধেক করাসহ কিছু দাবি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে মনীষার দাবি, আন্দোলন হলে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লোক দেখানো কিছু সমাধান করে। এবারও তাই হয়েছে।