ঢাবির সূর্যসেন হলে দুই শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন ছাত্রলীগের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার দা সূর্যসেন হলের দুই শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এমনকি হলের সিট ছেড়ে না দিলে তাদেরকে মেরে ফেলারও হুমকি দেন অভিযুক্তরা। রবিবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে হলে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সিফাত উল্লাহ সিফাত ও আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের অধীনে ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজস বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান অর্পণ। তারা দুজনেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী এবং হল ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশী ইমরান সাগরের অনুসারী। এর আগেও তারা দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলো।
ঘটনার শিকার ভুক্তভোগীরা হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও সূর্যসেন হল সংসদের সাবেক সদস্য মো. আরিফুল ইসলাম এবং থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হলের ইমিডিয়েট সিনিয়র সিফাত ফোন দেন। এসময় ঘুমিয়ে থাকার কারণে কলটি রিসিভ করতে পারিনি। এর কিছুক্ষণ পর সে (সিফাত) রুমের সামনে এসে দরজায় জোরে লাথি মারে। এসময় দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সিফাত ও অর্পণ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং তাদের (ভুক্তভোগী তরিকুল ও আরিফ) রুমে যেতে বাধ্য করে।
“এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমি ও আরিফ তাদের রুমে (৩৫১নং) গিয়ে দেখি সেখানে আরও ৫-৬ জন (মারুফ, তাসকিন, শাকিল ও রেজোয়ান) উপস্থিত। এসময় সিফাত এবং অর্পণ অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি করে। এ সময় রড দিয়ে মারতে আসে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে একজন রড ধরে ফেলে কিন্তু সিফাত আমাকে দেয়ালের উপর সজোরে আঘাত করে তাতে আমার পায়ে এবং মাথায় মারাত্মক আঘাত লাগে। তারপর জোর করে আমার ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং অনেকক্ষন ধরে আমার মোবাইল চেক করে।”
“এরপর সিফাত আমাকে বলেন, আমি মারলে মাথায় মারি। তারপর বলে, তোদের মেরে হলের টাংকিতে ফেলে রাখলেও আমাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। আজ আমরা যদি দুজন না হয়ে একজন হতাম তাহলে নিসন্দেহে আরেকটি আবরার ফাহাদ হত্যার মতো ঘটনা ঘটতো। তবে দুইজন থাকায় তা পারেনি। এমতাবস্থায় আমরা মারাত্মক জীবননাশের হুমকিতে আছি।”
ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম জানান, আমি ও তরিকুলকে জোর করে তাদের রুমে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর সিফাত ও অর্পণ আমাদের রড দিয়ে মারতে আসে। আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। এ অবস্থায় তাদের কাছে অনুরোধ করি যে আমার হাপানি রোগ আছে তাই ইনহেলার নিতে হবে। এটা বলার পরেও তারা আমাকে যেতে দিতে চায় না। একপর্যায়ে আমি অসুস্থ হয়ে পরলে তারা রুমে যেতে দেয় এবং বলে ইনহেলার নিয়ে দ্রুত রুমে আয়। এভাবে রাত আড়াইটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত আমাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চলে।”
তারা আরও জানান, দুপুরের মধ্যে হল না ছাড়লে মেরে হলের টাংকিতে ফেলে দিবে বলেও হুমকি দেয় সিফাত ও অর্পণ।
ভুক্তভোগীরা জানান, সম্প্রতি তাদেরকে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য ডাকা হলে পরীক্ষার জন্য তারা অংশ নিতে পারেননি। এরই জের ধরে পরবর্তীতে সিফাত ও অর্পণ তাদেরকে হল থেকে নামিয়ে দিতে চায়। পরবর্তীতে সেটিও ব্যর্থ হয়ে তাদের উপর নির্যাতন করে সিফাত ও অর্পণ।
এ বিষয়ে কথা বলতে মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মকবুল হোসেনকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অন্যদিকে, অভিযুক্ত সিফাত ও অর্পণকেও একাধিকবার কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
তবে হলের হাউজ টিউটর মুহম্মদ মোবারক হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এরকম ঘটনা আমার জানা নেই। তবে ঘটনার বিস্তারিত জেনে এবং হল প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হলের উপ-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও আসন্ন হল কমিটির পদপ্রত্যাশী ইমরান সাগর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন আরেকজনের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি হলের প্রভোস্ট স্যারের মাধ্যমে মিমাংসা করা জন্য বলেছি।