আংশিক কমিটিতেই মেয়াদ পার ছাত্রদলের
ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনে দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেটের থাবা থেকে বের করতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল বিএনপির হাইকমান্ড। ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সরাসরি ভোটে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইকবাল হোসেন শ্যামল। এর ২ মাস পর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষিত হলেও পরবর্তীতে মেয়াদ শেষেও এখনও তা ‘আংশিকই’ রয়ে গেছে।
এ কারণে ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মামলায় জর্জরিত অনেক নেতা কমিটিতে পদ পাননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দায়িত্ব পেয়ে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে কাজ করলেও এ কারণে ‘বির্তকিত’ হয়ে আছে বর্তমান কমিটি। তাছাড়াও রয়েছে বির্তকিতদের কমিটিতে স্থান দেওয়া, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সেচ্ছাচারিতা, তৃণমূলে কমিটি গঠনে অনিয়ম, পকেট কমিটি প্রভৃতি।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের কমিটি গঠিত হয়। এতে সভাপতি হন রুহুল কবির রিজভী এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন এম ইলিয়াস আলী। প্রথম নির্বাচিত এই কমিটি গঠনের কয়েক মাসের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হয়। এর ২৭ বছর পর ২০১৯ সালে আবার সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের কমিটি হয়। সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন খোকন ও শ্যামল। এই কমিটির মেয়াদ আজ রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শেষ হবে।
সংগঠনটির নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন পর কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তীতে ৬০ জনের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই ছাত্রদলকে তৃণমূল থেকে ঠেলে সাজাতে সাংগঠনিক টিম তৈরি করে দেয়া। এসব টিম উপজেলা, পৌর ও কলেজ কমিটি গঠন শুরু করেন। কিন্তু কমিটি গঠনের শুরু থেকেই আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম, পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ আসতে থাকে একের পর এক টিমের বিরুদ্ধে।
বর্তমান কমিটির অধীনে ইতোমধ্যে সারাদেশের ১ হাজার ৭০০’রও বেশি উপজেলা-থানা-পৌর ও কলেজ শাখার মধ্যে দেড় হাজারের বেশি শাখায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন আছে আরও শতাধিক কমিটি। পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে ৫০টির বেশি জেলা কমিটি। নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও সুনামগঞ্জ সাংগঠনিক জেলায়। এছাড়া ১৪টি সাংগঠনিক জেলা মর্যাদার কলেজেও নতুন কমিটি দিয়েছে ছাত্রদল। নতুন এসব কমিটি পেয়ে ইতোমধ্যে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড়িয়েছে তৃণমূলে। আর দীর্ঘদিন পর আবারও তৃণমূলে কমিটি করায় ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব সাধুবাদ পেয়েছে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো নেতাদের।
তবে অদৃশ্য কারণে বছরের পর বছর খেয়ে-না খেয়ে রাজনীতি করেও পদের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন সংগঠনটির শতাধিক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রদলের সকল কর্মসূচি অংশ নিয়েও ৬০ জনের কমিটিতে জায়গা পাননি অনেকে। আবার তাদের হাতে রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছে এমন অনেকেই এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে। ফলে না পারছেন পরিবারের কাছে ঠায়, মুখ লুকাতে হচ্ছে সহযোদ্ধাদের কাছ থেকেও। তাদের অভিযোগ, শতাধিক যোগ্য নেতা থাকার পরও দুই বছর ধরে আংশিক কমিটি দিয়েই চলছে ছাত্রদল। অথচ বর্তমান কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন এমন অনেকের চেয়ে যোগ্য, পরিশ্রমী, মেধাবী ছাত্র নেতা রয়েছেন পদের অপেক্ষায়।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, দুই বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় সংগঠনের কার্যক্রম কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবগত রয়েছেন। উনি সঠিক সময়ে তাদের দলে টেনে নিয়ে আসবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে দুই বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। এখন তারা তৃণমূলে ঢেলে সাজা এবং করোনার দোহায় দেবে। আসলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিলে একদিকে তাদের পছন্দের লোক আনা যাবে না, আর অন্যদিকে, কমিটিতে তাদের ক্ষমতা কমে যাবে। এ কারণেই মূলত দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এক নেতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়েও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। ফলে তাদের মধ্যেও সমন্বয় নেই। এখন পর্যন্ত এসএম হলের কমিটি দিতে পারেনি বর্তমান নেতৃত্ব। এজন্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পরেই করোনার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ছিল। দুই বছরের মধ্যে দুই দফায় দীর্ঘ কয়েক মাস কার্যক্রম স্থগিত ছিল। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। যার ফলে নির্ধারিত সময়ে আমরা কমিটি গঠন কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি।
কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কলেজগুলোতে একাধিক যোগ্য নেতা রয়েছে কিন্তু পদ দুটি। এজন্য এই কমিটিগুলো শেষ হলেই ১৫১ বা ২০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।