‘শিক্ষা সংকট মোকাবিলায় দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে’
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেছেন, একই ধারার বিজ্ঞানভিত্তিক গণমুখী শিক্ষানীতির দাবি বাস্তবায়নের জন্য এবং করোনাকালে সৃষ্ট শিক্ষা সংকট নিরসনে সারাদেশবাপী দুর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলতে হবে।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১) বিকেলে ৫৯তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মোঃ ফয়েজউল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম.এম. আকাশ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি কেএম মুত্তাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, ঢাকা মহানগর সংসদের সদস্য প্রিতম ফকির, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য মুক্ত রেজোয়ান, গাজীপুর জেলা সংসদের সভাপতি দিদারুল ইসলাম শিশির এবং মানিকগঞ্জ জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আহমেদ।
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মো. ফয়েজউল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে করোনাকালীন শিক্ষা সংকট মোকাবিলায় ৮ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। আমরা শিক্ষামন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আমরা বারবার দাবি করেছি রোডম্যাপ ঘোষণা করে সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা সাজাতে বলেছি। কিন্তু কোন ধরনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। সামনের দিনের শিক্ষা সংকটগুলো কিভাবে মোকাবিলা করা হবে তার জন্য কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের কোন তালিকা নেই সরকারের কাছে। আমরা দাবি জানাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরানোর জন্য শিক্ষাবৃত্তি এবং শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলো রেশনিং এর আওতায় আনতে। ওয়াজিউল্লাহ, মোস্তফা, বাবুলদের রক্তের শপথ নিয়ে আমরা সারাদেশব্যাপী দুর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলে শিক্ষার্থীদের দাবি, একই ধারার বিজ্ঞানভিত্তিক গণমুখী শিক্ষানীতির দাবি আদায় করবো।’
সমাবেশে অধ্যাপক কাবেরী গায়েন তার বক্তব্যে বলেন, ‘৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের শহীদদের রক্তের সাথে আমাদের পরবর্তীতে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। স্বাধীনতার পরবর্তীতে সকল সরকার বিজ্ঞানভিত্তিক একই ধারার গণমুখী, অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি প্রণয়নের কথা বললেও তারা সে কথা রাখেনি। করোনার ভেতর ক্লাস না নিলেও দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন ফি গ্রহণ করা হয়েছে, শিক্ষাকে সুচতুরভাবে পণ্যায়নে রূপান্তর করা হয়েছে। আজকে গণমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য ছাত্র ইউনিয়ন ভূমিকা রাখবে এই বিশ্বাস রাখি, অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি প্রণয়নের লড়াইয়ে আমিও আপনাদের সাথে শামিল হব।"
সমাবেশে অধ্যাপক এম.এম. আকাশ তার বক্তব্যে বলেন, ‘৬২ সালে ছাত্র সমাজের রক্তের সাথে শ্রমিকের রক্ত মিশে দাবি আদায় করা সম্ভব হয়েছিল। আজও যদি কোন দাবি আদায় করতে হয় তবে সেদিনের মতো ছাত্রের রক্তের সাথে শ্রমিকের রক্ত মিশে যেতে হবে। কিন্তু দেশের জনগণকে একত্রিত করার আগে আপামর ছাত্রসমাজকে একত্রিত হতে হবে। ১৯৬২ সালে শিক্ষার পণ্যায়ন রুখে দেওয়া গেলেও আজ কিন্তু সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষায় কর, ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। শিক্ষার অধিকার আদায়ের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ভোটে জেতার জন্য জামাত, হেফাজতের মন জুগিয়ে পাঠ্যপুস্তককে সাম্প্রদায়িকরণ করা হয়েছে। দাবি আদায়ে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকের রক্ত মিলিত হতে হবে এবং সংসদকে ব্যবসায়ীমুক্ত করে গণমুখী করে গড়ে তোলার আন্দোলন জোরদার করতে হবে।’
সমাবেশে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জাহিন, কোষাধ্যক্ষ মো. শামীম হোসেন, শরীয়তপুর জেলা সংসদের সভাপতি সাইফ রুদাদ, রাজবাড়ী জেলার সভাপতি কাওসার আহমেদ রিপন, চাঁদপুর জেলা সংসদের সভাপতি প্রণব ঘোষসহ বর্তমান এবং সাবেক নেতৃবৃন্দ।