ব্যাকডেট পদ্ধতির অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরে ৩২ প্রত্যাশীদের লিফলেট প্রকাশ

  © ফাইল ছবি

করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ততা বিবেচনায় স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ও মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ চাই, কোন ব্যাকডেট বা বয়স সমন্বয় নয় এই দাবিতে লিফলেট প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তারা ব্যাকডেট পদ্ধতির অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরেছে। এছাড়া তারা তাদের দাবির সামগ্রিক বিষয় তলে ধরে লিফলেট প্রকাশ করেছে। চাকরিপ্রত্যাশীদের একমাত্র দাবি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ চাই।

-করোনাকালীন অচলাবস্থায় সকল বয়সের শিক্ষার্থী – চাকরিপ্রত্যাশীরা ইতোমধ্যেই দেড় বছর হারিয়ে ফেলেছে যা দুই বছরের দিকে ধাবমান। সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় প্রায় দুই লাখ তরুণ-তরুণী চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ না পেয়েই বাতিলের খাতায় যোগ দিতে চলেছে ।

 -ব্যাকডেট দেওয়া বা বয়স সমন্বয়ের মাধ্যমে সকল বয়সী শিক্ষার্থী তথা চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। করোনা শুধুমাত্র ৩০ বছর অতিক্রম করে যাওয়া চাকরিপ্রত্যাশীদেরই ক্ষতি করেনি, বরং সকল বয়সীদের ক্ষতি করেছে। যে ছেলেমেয়েরা বিগত দেড় বছর ধরে অনার্স বা মাস্টার্স পর্যায়ে আটকে আছে তারাও সামনে ভুক্তভোগী হবে। কোভিড শুরুর সময়ে যারা ২৬ বছর বয়সের ছিলো তারা এখন ২৮, ২৭ এখন ২৯, ২৮ এখন ৩০। দুই বছর হতে চলা এই সময়কালে হাতেগোনা কয়েকটি সার্কুলার দেওয়া হয়েছে এবং চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো কোন পরিবেশ নেই।

- সরকারি বিধি মোতাবেক যে ৩০ বছর বয়স অবধি আবেদনের সুযোগ পাওয়ার কথা করোনার আঘাত কিন্তু প্রকৃতই সেই সুযোগ দিচ্ছে না। চাকরিতে আবেদনের বয়স স্থায়ীভাবে ২ বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করলে সকলেই তাদের হারিয়ে যাওয়া সময় ২ বছর ফিরে পাবে তথা সেই ৩০ বছরের প্রাপ্য সুযোগ পাবে।

- ১৯৯১ সালে শেষবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ করা হয় যখন গড় আয়ু ছিলো ৫৭ বছর । এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হলেও বৃদ্ধি পাই নাই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা।

- ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়সসীমা ২ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ৫৯ আর মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩২ করলে প্রবেশের জন্য সর্বোচ্চ হলেও যদি ৩৪ বছর লেগে যায় তবুও ২৫ বছর সরকারি চাকরির বয়স থাকে। ২৫ বছর সরকারি চাকরি না করলে সামগ্রিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা রয়েছে যা আমরা সকলেই জানি। সুতারাং চাকরিতে আবেদনের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করলে সেটা আর সাংঘর্ষিক হয় না।

- সাধারণের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ হলেও বিসিএস স্বাস্থ্য ও জুডিশিয়ারি এর ক্ষেত্রে ৩২ বছর।

- তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাবে করোনাকালে ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিসিএস থেকে কিন্তু অন্যান্য সকল সরকারি চাকরি থেকে নিয়োগ প্রাপ্তির তুলনায় সামান্য কয়েক শতাংশ মানুষ চাকরি পায়। মুজিব শতবর্ষের একটি অঙ্গীকার ছিলো অনেক পরিমাণে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে এদেশের যুব প্রজন্মের আরও বেশী পরিমাণে কর্মসস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে। করোনার আঘাতে অনেক পরিমাণে বিজ্ঞপ্তি তো দূরে থাক তেমন কোন সার্কুলার তথা পরীক্ষার সুযোগ না পেয়েই বয়সসীমা পার করতে চলেছেন কয়েক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী! অথচ অন্যান্য দেশগুলোতে আবেদনের বয়সসীমা অনেক বেশি।
- বর্তমানে সরকারিতে শূণ্যপদ প্রায় ৪ লক্ষ (৩,৮০,৯৯৫টি)। করোনার জন্য পদগুলো আরও জমাটবদ্ধ হয়ে আছে যা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের চলার গতিকে কিছুটা হলেও কমিয়ে রেখেছে। এই জমাটবদ্ধতা দূরীকরণে ও Demographic Dividend (কোন দেশের ইতিহাসে একবারই আসে এবং বাংলাদেশে চলমান) এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছরে উন্নীত করা অতীব জরুরী।

- প্রাপ্ত তথ্যমতে, করোনাকালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিমাণ ৮৭% কমে ১৩% এ উপনীত হয়েছে; বেকারত্বের হার ২০% থেকে ৩৫% এ উন্নীত হয়েছে৷ করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ততার স্বীকার এই দুই লক্ষ চাকরিপ্রত্যাশী বেকারত্বের হার আরও বৃদ্ধি করবে। অন্যদিকে সরকারি বিধির সাথে সঙ্গতি রেখে বেসরকারি চাকরিতেও প্রবেশের বয়সসীমা স্ট্যান্ডার্ড ৩০ ধরা হয়।

- ২৮শে আগস্ট, ২০২০ এ ভারতের আসাম রাজ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা করোনার জন্য ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে ।

- করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত যুব প্রজন্ম কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট চাল-ডাল বা অর্থ সাহায্য প্রত্যাশা করছে না, বেকার ভাতার দাবি করছে না ; করোনাকালীন ২ বছর হারিয়ে যাওয়ার দরুণ ৩২ প্রত্যাশা করছে ।


সর্বশেষ সংবাদ