ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদককে ক্ষমা চাইতে বললেন নুর
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারিকে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী গতকাল শনিবার এক গোল টেবিল আলোচনায় তারেক রহমানের বিষয়ে বলতে গিয়ে ছাত্রদলের তোপের মুখে পড়েন। তিনি তার মন্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বলায় সভায় উপস্থিত ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ওমর ফারুক কাউসার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিবাদ করেন এবং তারা দু'জন বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নুরুল হক নুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার আইডি থেকে ছাত্রদলের উদ্দেশ্যে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারিকে বলবো জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নক্ষত্রের নাম। এই বৃদ্ধ বয়সেও অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেশ ও জনগণের জন্য কথা বলে যাচ্ছেন। অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ জীবিত আছেন।দেশের এই পরিস্থিতিতে ক'জন সাহস নিয়ে কথা বলছেন? অনেক নামদামী শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী জাতির এই সংকটে যেখানে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেখানে এই বয়সেও গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শুধু বক্তব্য -বিবৃতিতে নয়, রাজপথেও সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
একদিন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বললাম, 'স্যার এই বয়সে, এই অসুস্থ শরীরে এতো প্রোগ্রামে যান কেন? কোন বাছ-বিচার নাই যে কেউ বললেই প্রোগ্রামে না যেয়ে সপ্তাহে ২/৩ টি প্রোগ্রামে যান।'
উত্তরে জাফরুল্লাহ চৌধুরী হেসে বললেন, 'আমি জানি ওদের তেমন লোক নাই, তারপরও আমি ওদের প্রোগ্রামে যাই। কারণ আমার কাছে ওরা একটা বল নিয়ে আসে।আমি গেলে ওদের প্রোগ্রামটা একটু মিডিয়ার যাবে, তাতে ওদের দু'জন লোক বাড়বে। নিজের কষ্ট হলেও ওদের তো ভালো একটা কাজ হবে।'
বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, এরশাদ ৩ রাষ্ট্রপতিকে দেশ ও জনগণের স্বার্থে পরামর্শ দিয়েছেন। স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তারাও জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সম্মান করতেন।এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দেশের সুস্থ ধারার রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সকলেই জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।
দেশ ও জনগণের স্বার্থে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি রাজপথে কার্যকর আন্দোলনের মাধ্যমে বিনা ভোটের এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারায় ও আন্দোলনের মাধ্যমে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারায় মাঝে মাঝে বিএনপি নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতেই তাদের সমালোচনা করে কিছু পরামর্শ দেন।
এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অভয় দিয়ে প্রায়ই বলেন, 'অবাধ-সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে শেখ হাসিনা বিরোধী দলে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হলে তার পাশেও থাকবেন।' কারণ, রণাঙ্গনের একজন হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রী হিসেবে তিনি যেমন খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা করেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও সম্মানের চোখে দেখেন। তবে এটা ঠিক, ভারতীয় ষড়যন্ত্রে ২০১৪ ও ১৮ সালের বিনা ভোটের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী বর্তমান অবৈধ সরকারের একজন কঠোর সমালোচক।
এমনকি দীর্ঘ জীবনে সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ভারতীয় ষড়যন্ত্র থেকে দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট' গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন।
গণমাধ্যমের খবরে দেখলাম, ছাত্রদলের এক সহ-সভাপতি কতিপয় কর্মীসহ বিএনপির সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আ.ন.ম এহসানুল হক মিলন ভাইয়ের প্রোগ্রামে শনিবার প্রেসক্লাবে জাফরুল্লাহ চৌধুরিকে শাসাচ্ছে, হুমকি দিছে! খুবই অবাক হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি। পিতৃ সমতুল্য দেশের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, জীবন্ত কিংবদন্তির সাথে এ আচরণ মেনে নেয়া যায় না।
তাই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করবো ঐ কর্মীসহ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করুন, ক্ষমা চান।
তরুণ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বলবো- রাজনীতি করতে হলে, অনেক ধৈর্য্যশীল হতে হবে,অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে।'
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার দুপুরে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অ্যাডুকেশন রিফর্ম ইনশিয়েটিভ (ইআরআই) আয়োজিত ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী-শিক্ষায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এবং করোনাকালীন শিক্ষা বাজেট: ২০২১-২০২২’ শীর্ষক আলোচনায় সভায় বিএনপিকে নিয়ে তীব্র মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির ক্ষমতায় আসারই ইচ্ছে নেই। ক্ষমতায় আসতে হলে ইচ্ছে-আগ্রহ থাকতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরিকল্পনা করতে হবে যে কোন কোন জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। সেগুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'আমি বারবার বলেছি- তারেক তুমি দুই বছর চুপচাপ বসে থাকো। পারলে বিলেতে (বিদেশ) লেখাপড়ায় যুক্ত হয়ে যাও, সেখানে বহুভাবে লেখাপড়া হয়।'
এমন বক্তব্যে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ওমর ফারুক কাওছার সালাম জাফরুল্লাহকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনি বিএনপির কে? আপনি বিএনপি নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলেন?'
জবাবে জাফরুল্লাহ বলেন, না কেউ না। এটা তো গণতন্ত্রে আমার বলার অধিকার আছে। তখন ছাত্রদলের ওই নেতা বলেন, না। আপনি অন্যদের নিয়ে বলুন। আমাদের নেতা সম্পর্কে বলছেন, আপনি তো বিএনপির কেউ না। কখনোই কথা বলবেন না। আর যদি কখনো কথা বলেন, কিছু হলে আমরা দায়ী থাকব না। আপনি জয়কে (সজিব ওয়াজেদ জয়) নিয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী) নিয়ে বলেন। এসব কথা বলার পর ছাত্রদলের নেতারা সভা থেকে চলে যান।