শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে সরকার
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের কঠোর সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজেট প্রস্তাবনায় প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাকে পণ্যায়ণ করার প্রস্তাবই করা হয়েছে। কারণ এই প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ তো বাড়েইনি উল্টো গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ কমেছে।
আজ শুক্রবার সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলের যৌথ বিবৃতি উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনার কারণে গত প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত শিক্ষক-কর্মচারীরা বেশ কষ্টে দিনযাপন করছেন। এছাড়াও শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পরেছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত নন এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মচারীদের জন্য নেই কোন আলাদা বরাদ্দ। শিক্ষাখাতে বরাদ্দের প্রস্তাব হয়েছে মোট বাজেটের ১১.৯২% যা মোট জিডিপির ২.০৮%।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অথচ আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২৫% বা মোট জিডিপির ৮% বরাদ্দ দিতে হবে। আমরা আরও লক্ষ্য করেছি প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর ১৫% ট্যাক্স আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই অলাভজনক কথাটা কেবল কাগজ কলমে।
‘‘মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে একেকটা বড় বড় সুপার মার্কেটে। সুনির্দিষ্ট টিউশন ফি নির্ধারণে কোন নীতিমালা না থাকায় এই প্রস্তাবিত ট্যাক্সের চাপ গিয়ে পড়বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর।’’
তারা আরও বলেন, ১৯৭২ সালে গঠিত খুদা শিক্ষা কমিশন ১৯৭৪ সালেই প্রস্তাব করেছিল বাজেটে মোট জিডিপির ৫-৭ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের। এমডিজি বা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাজেটে শিক্ষা যাতে এককভাবে ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার কথা বাংলাদেশ সরকার বলছে তারা এমডিজি পূরণ করে এসডিজি বা সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলর পথে হাঁটছে। অথচ তারা শিক্ষাখাতে কখনই মোট বাজেটের ১২ শতাংশ বা মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশের উপরে বরাদ্দ দেয়নি। এর থেকেই প্রমাণিত হয় সরকার শিক্ষার্থীদের সাথে দিনের পর দিন প্রতারণা করে আসছে।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রস্তাবিত এই বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোতে সবচাইতে খুশি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সাধারণ মানুষ যাদের আয় কমেছে তাদের জন্য নেই কোনও প্রস্তাবনা। এমনকি এই করোনা কালীন সময়ে যারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন তাদের জন্য নেই কোন আলাদা বক্তব্য।
‘‘এছাড়া বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে স্বাস্থ্যখাত। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত বাজেট মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৯৫% যেখানে করোনাকালীন ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে সেখানে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য ও গবেষণাখাতে নেই কোন আলাদা পদক্ষেপ। টিকার জন্য নেই আলাদা কোনও বরাদ্দ।’’
বাজেট প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই প্রস্তাবিত বাজেটকে কোনোভাবেই জন-বান্ধব বাজেট বলা যায় না। বরং এই বাজেট ধনীকে আরও ধনী: গরীবকে আরও গরীব করাই প্রস্তাব। এই বাজেটে শিক্ষাকে পণ্য হিসাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত পুরোটাই উপেক্ষিত। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এই বাজেট প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করছে।