২৫ এপ্রিল ২০২১, ০০:০৪

নুরের সংগঠন থেকে এক নেতার পদত্যাগ

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সংগঠন ‘শ্রমিক অধিকার পরিষদ’ থেকে পদত্যাগ করেছে শ্রমিক নেতা ও এক্টিভিস্ট আরমান হোসাইন। শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আরমান। 

পদত্যাগকালে আরমান হোসাইন বলেন, বাংলাদেশ যুব, ছাত্র ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের মাধ্যমে সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই বেগবান হবে বলে আমি প্রত্যাশা করেছিলাম। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ-যুবকদের সাথে কাজ করে আমরা সেই লড়াই এর অংশ হতে চেয়েছি। কিন্তু বিগত প্রায় এক বছর যাবত বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ এবং সামগ্রিকভাবে অধিকার পরিষদের সাথে কাজ করার পর আমাদের উপলব্ধি হয়েছে যুব, ছাত্র ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ সেই লক্ষ্য থেকে অনেকটা সরে গেছে। পাশাপাশি এখানে কতিপয় ব্যক্তির খেয়ালখুশীমত সংগঠনকে পরিচালনার করার ফলে সংগঠনে যুক্ত বেশিরভাগ কর্মীর আন্তরিক আগ্রহ এবং ব্যাপক আত্মত্যাগ সত্ত্বেও সংগঠন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে না।

তিনি অভিযোগ করেন, অধিকার পরিষদের এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনীতি নাই, সেই রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ কোনো প্রকার সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নাই, এবং তা গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগও অনুপস্থিত। উপরন্তু এইসব গড়ে তোলার চেষ্টা করলে তার পথে পরিকল্পিত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার মতো অবস্থা বিরাজমান আছে। তবে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও এর একটা ‘রাজনৈতিক অভিমুখ’ তৈরি হয়েছে বলে অনেকের কাছে যেমন প্রতীয়মান হচ্ছে, তেমনি আমাদের কাছেও, এবং যে অভিমুখ রাষ্ট্র সংস্কারের লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেয়ে ভিন্ন দিকে।

তিনি আরো বলেন, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য-উদ্যেশ্য এবং নীতিকৌশল না থাকার কারণে, বরং কোনো-কোনো ক্ষেত্রে সাময়িক উত্তেজনার ফাঁদে পড়ে বিভিন্ন আত্মঘাতী পদক্ষেপের নজির সৃষ্টি হচ্ছে। আর সেসকল পদক্ষেপের কারণে অনেক সহযোদ্ধার মারাত্মক রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার হওয়ার দৃষ্টান্তও ইতিমধ্যে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। সংগঠন হিসেবে অধিকার পরিষদ বর্তমানে যে পরিস্থিতি পার করছে, এরকম সময়ে নেতৃত্বের যে দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান থাকা দরকার আমি  নিজেকে  তার জন্য প্রস্তুত করতে পারছি না। কারণ সংগঠনের নেতৃত্ব যেই পথে সংগঠনকে পরিচালনা করছেন এবং অধিকার পরিষদের সাথে আমার  যে রাজনৈতিক বোঝাপড়া ছিলো, আমি মনে করছি এই পথ তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আর যেই পথ ও পদ্ধতিকে আমরা নিজেরা রাজনৈতিকভাবে ভুল বা অগ্রহণযোগ্য মনে করি, সেই পথে সংগঠনকে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করার মতো আত্মপ্রবঞ্চনা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

আরমান হোসাইন বলেন, ফলে উভয়-পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে সংকটকালীন সময়ে সংগঠনের হাল ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট পদে, নেতৃত্বের বিশ্বাস ও বিশ্লেষণে বিশ্বাসী, যোগ্য মানুষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের নিমিত্তে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে আমার অব্যাহতি নেয়া এই মুহূর্তে সংগঠনের জন্য খুবই জরুরি বলে আমরা মনে করছি। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে অদ্য ২৪ এপ্রিল থেকে আমি  নিজেকে আমার  দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় আমরা বুঝতে পারি বাংলাদেশকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে দরকার রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা। অধিকার পরিষদের নেতৃত্ব সেই রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতির জন্য সংগঠন গড়ে তুলতে আগ্রহী বলেই অধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দের অনুরোধে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আমি শ্রমিক অধিকার পরিষদের দায়িত্বে এসেছিলাম এবং দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য গণতান্ত্রিক তরুণ-যুবকদেরকে সেই আন্দোলনে যুক্ত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য অধিকার পরিষদ সেই রাজনীতি থেকে যে কোন কারনেই হোক অনেকটুকু সরে এসেছে।