জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিলুপ্তির দুই বছরেও নেই জবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি, পদপ্রত্যাশীরা হতাশ

  © লোগো

বিলুপ্তির দুই বছর পরও নতুন কমিটির দেখা পায়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগ। ভাষা আন্দোলন থেকে ছয় দফা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সব আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের অবদান স্মরণীয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সংগঠনটির কার্যকর কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। আর হতাশায় ভুগছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পদপ্রত্যাশীরা।

জানা যায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির ডাকা অবরোধে বাহাদুর শাহ পার্কের বিপরীতে দর্জি বিশ্বজিৎকে দিনের আলোতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের পর থেকেই জবি ছাত্রলীগের সুনাম, ঐতিহ্যে ও সাংগঠনিক অবস্থার ভাটা নামে। ছাত্রলীগের নেতাদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আন্ত-কোন্দল ও মারামারিতে বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই জবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ-সিরাজের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পর আর এই ইউনিটটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির, শোভন-রাব্বানী ও সর্বশেষ জয়-লেখকের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গৌরবান্বিত এই ইউনিটটির ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সম্মেলনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ শরীফ-সিরাজ কমিটির বিলুপ্তির ছয় মাস পর ১৭ অক্টোবর ৩৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটি ঘোষণার প্রথম সপ্তাহে চাঁদাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নেতাকর্মী বহিষ্কার হন।

২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়াারি ও ১৮ ফেব্রুয়ারী তরিকুল-রাসেল কমিটির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে সরাসরি ছাত্রলীগের প্যাডে নাকি সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেয়া হবে এ সিদ্ধান্তে ছয় মাস অতিক্রম করে কেন্দ্রীয় নেতারা। ২০ জুলাই সম্মেলনের পর নতুন কমিটি দেয়ার আগে বিভিন্ন অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিদায় ঘটে। শীর্ষ দুই নেতার বিদায়ের পর জবি ছাত্রলীগ কর্মীদের নিজের নামের পাশে পদবি লাগানোর ইচ্ছেরও ভাঙন ধরে।

পদপ্রত্যাশী শাখা ছাত্রলীগ নেতারা জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের ভারমুক্তের অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন অসংখ্য জাতীয় নেতার রাজনীতির আতুর ঘর জগন্নাথ ছাত্রলীগের কর্মীরা। কিন্তু ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকিতে ছাত্রলীগের সর্ব্বোচ্চ অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখক-জয়ের ভারমুক্ত করে দিলেও তারা গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটটির নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়নি। ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশন নির্বাচনের অযুহাতে নতুন কমিটি গঠনে কালক্ষেপণ করেন তারা।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ কোভিড-১৯ এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা ও ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে লকডাউন শুরু হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মীদের নামের পাশে পদবি লাগানোর স্বপ্নেও লকডাউন চলে আসে। হতাশায় অনেক কর্মীরাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ইতি টানছেন, আবার অনেকেই স্থানীয় উপজেলা ও জেলা ছাত্রলীগের সদস্য পদের জন্য নতুন করে লবিং তদবির করছেন ও পদ গ্রহন করছেন।

জবি শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, গত বছরের ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ছাত্রলীগের এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিটের কমিটি সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেয়ার নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে। কিন্তু ছাত্রলীগের কর্ণধার আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য সেই নির্দেশনারও ভ্রুক্ষেপ করেননি।

জবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এফ এম শরীফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাম্পাস। নেতৃত্ব তৈরি করার অতীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। এখান থেকে ছাত্ররাজনীতি করে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছে।

তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ একটা বৃহৎ সংগঠন এ ইউনিটের কমিটি নাই এটা ভাবা যায় না। আমরা সাবেক ছাত্রনেতা হিসাবে আমরা ভাবতে পারি না। আমাদের অনুরোধ কেদ্রীয় ছাত্রলীগ জগন্নাথ ছাত্রলীগের দ্রুত কমিটি দেবে। যাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হবে তারা জগন্নাথের ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাবে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের তিন দিনের মধ্যে নতুন কমিটি দেয়া নৈতিক সিদ্ধান্ত। করোনার কারণে হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু সংঘটনটির সাংঘঠনিক অবস্থা সচল রাখতে জরুরী ভিত্তিতে একটি ‘এডহক’ কমিটি দেয়া যেতে পারে।

এদিকে জবি ছাত্রলীগের কমিটি কবে হবে এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ লেখক ভট্টাচার্যের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ