শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার রোডম্যাপ ঘােষণার দাবি ছাত্র ইউনিয়নের

  © টিডিসি ফটো

বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার রোডম্যাপ ঘােষণাসহ ৮ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসব দাবি আদায়ে আগামী ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ২৫ জানুয়ারি সারাদেশে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক মতবিনিময় সভা করা হবে। এছাড়া ২৭ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে ৮ দফা দাবির সমর্থনে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি এবং স্বাক্ষর সংগ্রহ শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করােনা ভাইরাসের প্রকোপে গত বছর মার্চ মাস থেকে সারাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলাের বিদ্যায়তনিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। করােনার প্রকোপে প্রচুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি, দারিদ্রাতার হার বেড়েছে। এতকাল ধরে পর্দার আড়ালে রাখা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কসার কলটি বের হয়ে এসেছে। দীর্ঘকাল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর অংশটিকে মহামারী শেষে আবার শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরত আনা সহজসাধ্য হবে না।

দীপক শীল বলেন, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীকে ছাড়াই পাঠ-কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত অবকাঠামােগত সুবিধা না থাকা, ইন্টারনেটের মন্থরগতি, ডিভাইসের অভাবে অধিকাংশ দরিদ্র শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রমে যথাযথ আশগ্রহণ করতে পারেনি। শতভাগ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নিশ্চিত না করেই চলছে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলাে টিউশন ফি শ্রাদায় করার ঘৃণ্যতমতম প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এসাইনমেন্টের নামে নেয়া হচ্ছে নামে-বেনামে ফি। তারপরেও নিশ্চিত হচ্ছে না এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন। সংকটকালীন সময়ে বাতিল হয়েছে ২০২০ সালের এইচএসসি, জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষা। এইচএসসি’র শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় আছে ।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংকট ভিন্নতর। একদিকে কর্মসংস্থানের সংকট, অন্যদিকে ফুরিয়ে যাচ্ছে চাকরীর বয়সসীমা। সেশনজটের ভয়াবহ চাপকে সামাল দিতে একেবারেই প্রস্তুত নয় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাই ঝুঁকি নিয়েও একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে চায়। এমতবস্থায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি, সিলেবাস পুরণ না করে, পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করলেও হল খুলে দিতে রাজি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলাের হলওলাে দখল করে আছে অছাত্র, সন্ত্রাসীরা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা না পারছে প্রস্তুতি নিতে, না পারছে আবাসনের সংকট দূর করতে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন সুবিধা পর্যন্ত দিতে রাজি না। এমতাবস্থায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এই সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের করোেনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন প্রদান করা প্রয়ােজন।

দীপক শীল বলেন, এই মহামারীর মধ্যেও বাণিজিলক কোর্স বন্ধ নেই। অতিরিক্ত লাভের আশায়, ও নিয়মিতদের পাঠ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দেদারসে চলছে বাণিজ্যিক কোর্সের কার্যক্রম। করােনা ভাইরাসের মহামারীতে দেশের ভগ্নশিক্ষাখাত ধ্বংসকূপে পরিণত হয়েছে। এক প্রকার অদৃশ্যের ওপর ভর করেই চলেছে দেশের শিক্ষার্থীরা। তারই মধ্যে পাঠ্যক্রমকে দিনকে দিন সাম্প্রদায়িক করে তােলার প্রক্রিয়া বন্ধ নেই। পাঠ্যপুস্তকে অসাম্প্রদায়িক লেখকদের লেখা বাদ দেয়া শুরু করে অলঙ্কর, সর্বত্রই সাম্প্রদায়িক বীজ রােপণ করে দেয়ার অপচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের পরামর্শে পাঠ্যবই সংস্কারসহ নানাবিধ উপায়ে সাম্প্রদায়িক গােষ্ঠীগুলােকে আস্ফালনের সরকারি সুযােগ তৈরি করে দেয়াতেই ভাঙ্গার মতাে ঘটনা দেখেছে বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-

১) করােনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন ফি মওকুফ করতে হবে। এসাইনমেন্টের নামে আদায়কৃত ফি ফেরত দিত হবে।

২) নামে-বেনামে ফি আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩) বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার রোডম্যাপ ঘােষণা করতে হবে।

৪) সেশনজট রােধে দ্রুত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করতে হবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট রােধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৫) পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ করতে হবে।

৬) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলােতে আবাসিক হল খুলে দিয়ে, আবাসনের ব্যবস্থা করে পরীক্ষা নিতে হবে। অছাত্র-সন্ত্রাসীদের হল থেকে বিতাড়ন করতে হবে।

৭) সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধ করতে হবে।

৮) অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন দিতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ