এক সপ্তাহের মধ্যে কোটা পুনর্বহাল না করলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি

  © সংগৃহীত

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল না করলে কঠোর আন্দোলন ও উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমিটি। শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ হুমকি দেওয়া হয়।

এসময় সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- জাতির পিতা ও তার পরিবারসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি সব চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, সংরক্ষণ, বিশেষ কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারি থেকে শতভাগ বাস্তবায়ন; স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংরক্ষিত পদগুলো বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব পদে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পারিবারিক সুরক্ষা আইন, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণে বিশেষায়িত মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল নির্মাণ এবং তাদের কল্যাণে মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে ও দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। রাজাকারসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, তাদের বংশধরদের সরকারি সব ভর্তি ও নিয়োগে অযোগ্য ঘোষণা এবং চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে চাকরিচ্যুত করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সব ধরনের অপপ্রচার বন্ধ, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে স্ব-ঘোষিত রাজাকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বাসভবনে হামলাসহ সব ধরনের অরাজকতা সৃষ্টিকারী স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

কমিটির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম তুষারের সভাপতিত্বে এতে সঞ্চালনা করেন গোলাম কিবরিয়া। সমাবেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মের আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম তুষার বলেন, ১৯৯৭-২০০১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী প্রতি-স্বাক্ষরিত সনদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৩৩ প্রমাণকে নাই, অর্থাৎ বাতিল করা হয়েছে। এ সনদ বাতিলের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কিত করার গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি-স্বাক্ষরিত সনদ বাতিল করা হয় তাহলে এ দেশ কারা চালায়? বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৭ সালে এ কোটা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাতিলের মাধ্যমে তাকে বিতর্কিত করা হয়েছে। যারা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের কড়া জবাব দিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নতুন প্রজন্ম প্রস্তুত আছে।

মানববন্ধন থেকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল না করা হলে কঠোর আন্দোলন ও উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। 

মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, যাদের রক্তের ওপর দিয়ে এদেশের মানচিত্র ও লাল সবুজের পতাকা রচিত হয়েছে তাদের সম্মান করে জাতির পিতা মুক্তিযোদ্ধা কোটা দিয়েছেন। কিন্তু কূটকৌশলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান, অসম্মান এবং হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। যা গভীর ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি।

সমাবেশ থেকে অবিলম্বে কোটা পুনর্বহাল করে প্রিলিমিনারি থেকে বাস্তবতায়নের দাবি জানানো হয়। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ১০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর জন্য যে মতামত ব্যক্ত করেছেন তার বিরোধিতা করে মানববন্ধন থেকে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ পুনর্বহাল করার দাবি জানানো হয়। 

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মোল্লা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ তাতী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাহারুল ইসলাম সোহেল, মুক্তিযোদ্ধা পেশাজীবি পরিষদের সভাপতি ফজলে রাব্বি রানা প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ