নেতা বানাতে কতজনের থেকে টাকা নিয়েছেন— ছাত্রলীগ নেতাকে লেখক
রাজধানীর গুলিস্তানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের জরুরি সভায় তুমুল হট্টগোল হয়েছে। নানা ইস্যুতে প্রায় পুরো সময় উত্তপ্ত ছিল সভা। সভার আলোচ্য বিষয় ছিল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন, কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদ পূরণ, জেলার দায়িত্ব বণ্টন এবং সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আলোচনার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের কাছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী জানতে চান, তাঁর এলাকা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে তাঁকে জানানো হয়নি কেন।
লেখক ভট্টাচার্য এর জবাবে প্রদীপকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘নেতা বানানোর কথা বলে কতজনের কাছ থেকে বিকাশে পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়েছেন?’ রোববার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় টাকা নেওয়ার’ অভিযোগ উঠলে প্রদীপ এর প্রমাণ চান। প্রমাণ হলে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও জানান। তখন লেখক ভট্টাচার্য বলেন, টাকা লেনদেনের স্ক্রিনশট তাঁদের কাছে আছে। জবাবে প্রদীপ বলেন, ‘স্ক্রিনশট তো নীলক্ষেতে বানানো যায়। পাঁচ হাজার টাকায় কি নেতা বানানো যায়? এ অভিযোগ কেউ বিশ্বাস করবে না।’
প্রদীপ চৌধুরী এর সত্যতা নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা অপ্রত্যাশিত।’ আর লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিষয়টি তেমন কিছু নয়। কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম।’
এর আগে গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী ফাল্গুনী দাসকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশি ও শামসুন নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি সোহান খান। তখন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামস ঈ নোমান সোহানের উদ্দেশে প্রশ্ন কেরেন, ‘আমার প্রশ্ন, আপনাকে গালি দিলে কী করবেন?’
এ নিয়েও সভায় ব্যাপক হট্টগোল হয়। প্রশিক্ষণবিষয়ক উপ-সম্পাদক মেশকাত হোসেন তখন নোমানকে ‘তুই’ সম্বোধন করে বসতে বললে নোমান এর শাস্তি চান। পরে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ বিষয়ে সোহান খান বলেন, ‘ফাল্গুনী দাসকে মারধরের ঘটনায় সভাপতি বলেছেন, সে হাসপাতালে আছে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ট্রমা কাটিয়ে উঠলে ঘরোয়া সমাধান করা হবে। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নই। নোমানের সঙ্গে মারধর করা নেত্রীদের কী সম্পর্ক, তাও পরিষ্কার নয়। সভায় সম্মেলন ছাড়া ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি করারও বিরোধিতা করেছি। এ নিয়েও সন্তোষজনক জবাব পাইনি।’
সভায় কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান প্রশ্ন তোলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মাদক-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে। তখন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান বলেন, ‘এ বিষয়ে সভাপতিকে দালিলিক প্রমাণ দিয়েছি। তবুও কালক্ষেপণের কারণ কী?’ এতে লেখক ভট্টাচার্য পাল্টা প্রশ্ন করলে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে জয় বলেন, ‘কিছু ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার পর দেখা গেছে ঘটনা সত্য নয়। তবুও যাচাই-বাছাই করে দেখব।’