‘দুশ্চরিত্রা’ না ‘দুশ্চরিত্রহীন’, নুরের শব্দের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে
ফেসবুক লাইভে ধর্ষণ মামলার বাদীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার অভিযোগ সম্পর্কে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘দুশ্চরিত্রা নয়, আমি দুশ্চরিত্রহীন বলেছি৷’ নারীনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বাংলা ভাষায় ‘দুশ্চরিত্রহীন’ শব্দই নেই, নুর আসলে কৌশলে দায় অস্বীকারের অপচেষ্টা করছেন।
নুরুল হক বলেছেন, ‘দুশ্চরিত্রহীন, মানে তাকে চরিত্রবান বা চরিত্রহীন কোনোটাই বলিনি। তিনি অন্যের প্ররোচনায় এসব কাজ করছেন।’ এর জবাবে ধর্ষণের মামলা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী বলেন, ‘নুর আগেই আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলো। আর এখন ফেসবুক লাইভে আমাকে দুশ্চরিত্রা বললো। এতেই বোঝা যায় যে, তার আসল উদ্দেশ্য কী।’
নুরুল হক নুর গত রবিবার রাতে ফেসবুক লাইভে তাদের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহ আগে করা ধর্ষণ মামলা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তদন্ত করে দেখেছি, ছাত্র অধিকার পরিষদের আব্দুল্লাহ হিল বাকি, নাজমুল হুদা ও সাইফুল ইসলাম এবং আমার এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই৷’
গত ২০ সেপ্টেম্বর লালবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নুরুল হক নুর ও ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন। আর নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ধর্ষণে সহযোগিতার। অভিযুক্তদের মধ্যে মামুন ও সোহাগকে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
ওই ছাত্রী ৮ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অনশন শুরু করেন। শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসার পর আবার অনশন শুরু করেছেন তিনি।
মামলার পর তিন সপ্তাহে কোনো আসামীকে গ্রেপ্তার না করলেও অনশন শুরুর পর ১১ অক্টোবর দুই আসামি ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মো. সাইফুল ইসলাম এবং ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এ প্রসঙ্গে ওই ছাত্রী বলেন, ‘ছয়জন আসামিকেই গ্রেপ্তার করতে হবে। সব আসামিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমি অনশন চালিয়ে যাবো।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘আগে আমাকে নূর বলেছিলেন এই ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাকে পতিতা হিসেবে অভিহিত করা হবে। এতদিন তার সমর্থকরা এই কাজ করে আসছিলো। নানাভাবে আমার সম্মানহানি করেছে তারা। এবার ভিপি নূর নিজেই তা করলো। ফেসবুক লাইভে সে আমাকে দুশ্চরিত্রা বলেছে। এটা বলে সে শুধু আমারই সম্মানহানি করেনি, ডাকসু ভিপি পদেরও অমর্যাদা করেছে। আমি এটা নিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছি।’
নুর যে এখন ‘দুশ্চরিত্রহীন’ বলেছেন, ‘দুশ্চরিত্রা’ বলেননি বলে একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন সে প্রসঙ্গে অনশনরত ছাত্রী বলেন, ‘আসলে সে কী বলেছে তা সবাই জানে। কোন প্রেক্ষাপটে বলেছে তা-ও স্পষ্ট। ব্যাখ্যা দিলেই তো সব ঠিক হয়ে যায় না।’
নুর বলেন, ‘তাকে পরোক্ষভাবে চরিত্রবান বা চরিত্রহীন সেটা আমি বুঝাইনি। তাকে খারাপ মেয়ে বলিনি। তিনি যে কারো প্ররোচনায় এটা করছেন আমি সেটা বুঝাতে চেয়েছি। এই অনশনের সময় তিনি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীবেষ্টিত ছিলেন। ছাত্রলীগের প্ররোচনায় তিনি এসব করছেন।’
যে তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিও ছিলেন সেই তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তে নাজমুল হাসান সোহাগের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছি। হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আর মামুনের সাথে আমরা যোগাযোগও করতে পারিনি। কিন্তু আমিসহ বাকি চারজনের ওই ঘটনার সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই।’
তবে ধর্ষণ মামলার আসামিদের প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয়া বা বক্তব্য রাখার সুযোগ থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজ। তিনি বলেন, ‘মামলা হয়েছে। তদন্ত হবে। আদালতই দেখবে কে দোষী আর কে নির্দোষ। নুর তাকে যে দুশ্চরিত্রা বলেছেন, সেটা একটি অপরাধ। আমাদের এখানে এটা চলে আসছে। কোনো নারী ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির অভিযোগ করলেই এক গ্রুপ তার চরিত্র নিয়ে কথা বলা শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্যই থাকে অপরাধীকে আড়াল করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘তিনি (নুর) যদি এখন নতুন ব্যাখ্যা দেন, দুশ্চরিত্রা নয়, দুশ্চরিত্রহীন বলেছেন, তা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এটাও তিনি খারাপ উদ্দেশ্যে করছেন। কারণ, তার কথার মোটিভ বোঝা যায়। আর বাংলা ভাষায় দুশ্চরিত্রহীন বলে কোনো শব্দ আছে বলে আমার জানা নেই।’
আর নুরুল হক নুরের এক নারী সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘মেয়েদের প্রতি নূরের যে কী ধরনের অশ্রদ্ধা তা তিনি ওই অভিযোগকারী ছাত্রীকে দুশ্চরিত্রা বলে প্রমাণ দিলেন। এই ধরনের কথা কোনো সুস্থ মানুষ বলতে পারেন না। এটা নৈতিকতা ও আইনবিরোধী।’ খবর: ডয়েচে ভেলে।