৩০ আগস্ট ২০২০, ২২:০৭

দল গঠনের আগেই নিবন্ধন নিয়ে শঙ্কায় নুর-রাশেদরা

  © ফাইল ফটো

রাজনৈতিক দল গঠনে জোর প্রস্তুতি চলছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের। ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’ স্লোগান ধারণ করে চলতি বছরের শেষ দিকে এই সংগঠন আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহযোগী সংগঠন হিসেবে যুব অধিকার, প্রবাসী অধিকার ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ গঠনের এখন পেশাজীবী পরিষদ গঠনের কাজ চলছে। এরপর রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেবেন তারা।

যদিও সবকিছুকে ছাপিয়ে শঙ্কা জেগেছে— রাজনৈতিক দলটি সরকারের নিবন্ধন পাবে তো? তথ্যমতে, ২০০৮ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের যে বিধান আনা হয়, সেই বিধানে থাকা তিনটি শর্তের একটি পূরণ করলেই কোন দল নিবন্ধনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হত। কিন্তু নতুন স্বতন্ত্র আইনের খসড়ায় দু’টি শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।

এই শর্ত তিনটি হচ্ছে- বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যে কোন একটি নির্বাচনে একটি দলের অন্তত একটি আসন অথবা পাঁচ শতাংশ ভোট পাওয়ার রেকর্ড থাকতে হবে। এছাড়া একটি দলের কমপক্ষে ২১টি জেলায় বা দুশ’ উপজেলায় কমিটি থাকতে হবে। এছাড়াও নতুন আইনে পরোক্ষ কিছু শর্ত রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের আইন অনুযায়ী একটি শর্ত পূরণ করার মত সক্ষমতা তাদের রয়েছে। কিন্তু নতুন আইনে অন্তত দুটি শর্ত পূরণ করা অনেকটাই অসম্ভব। সুতরাং রাজনৈতিক দল গঠনের পর কোন প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন নিশ্চিত করা হবে— বর্তমানে সেটি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গেলে অবশ্যই নিবন্ধন দরকার। তবে ২০০৮ সালের আগে সহজেই নিবন্ধন করা যেত। কেন্দ্রীয় অফিস, গঠনতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় কমিটি থাকলেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যেত।

কিন্তু ২০০৮ সালে যখন সেনা সমর্থন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলো; তখন তারা কিছু শর্ত দিয়ে দিল। তাদের তিনটি শব্দের মধ্যে ছিল— দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনে দলটির অন্তত একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হবে; ভোটের পাঁচ শতাংশ পেতে হবে; একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকতে হবে।

রাঁশেদ বলেন, পরবর্তীতে ২০২০ সালের নুরুল হুদা কমিশন এ তিনটি শর্তের ভিতরে আরও কিছু শর্ত যোগ করে দিয়েছে। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আসতে হবে। যে দল নিবন্ধনের জন্য প্রত্যাশী সে দল কীভাবে দলীয় প্রতীক কে নির্বাচন করে। বাংলাদেশ তো এরকম নির্বাচন কখনো হয়নি যে স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে তার কোন প্রতীক দেয়া হয়। এটি একটি বিভ্রান্তমূলক শর্ত এবং ষড়যন্ত্র।

তিনি বলেন, সারাদেশে আমাদের জনসমর্থন তৈরি হয়েছে এবং সেই জনসমর্থন আবেগের জায়গা থেকে নয় বরং বিবেকের জায়গা থেকে। মানুষ বুঝতে পেরেছে স্বাধীনতার পর থেকে যে রাজনৈতিক দলগুলো এসেছে তারা কেউই জনগণের কল্যাণে মানুষের জন্য রাজনীতি করেনি; যেটা আমরা করতে যাচ্ছি।

রাশেদ মনে বলেন, ‘আমরা যেহেতু কোটা সংস্কার আন্দোলনের মত বিরাট একটি অর্জনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য একের পর এক কাজ করছি; সেই জায়গা থেকে নতুন যে রাজনৈতিক উত্থান, সে উত্থানকে দমিয়ে থাকার জন্যই নির্বাচন কমিশন দ্রুত এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

রাশেদ খাঁন আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা নতুন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি। অনেকেই কথা বলছে। তবে এটি যেহেতু খসড়া অনুমোদন, তাই আবার সংশোধনের মাধ্যমে আইন পাস করাতে হবে। আশা করি নির্বাচন কমিশন আগের জায়গায় ফিরে আসবে। যদি ফিরে না আসে, তবে আমরা বিকল্প পথে হাঁটব।’

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার আইনটি নিয়ে যে নতুন তিনটি ফর্মুলা দিয়েছে, তা নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে পুরোপুরি বিরোধী। নির্বাচন কমিশন বর্তমানে যে তিনটি শর্ত আরোপ করেছে; সেই শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশের নতুন কোনো রাজনৈতিক দল রাজনীতি করতে পারবে না। এ সময় তিনি শর্ত শিথিল না করলে আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।’

এর আগে চলতি বছরেই রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশকে একটি স্বৈরতন্ত্র রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার নিকে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার চাচ্ছে নতুন করে যাতে কোন রাজনৈতিক দল ঘরে না উঠে বা নতুন করে যাতে নিবন্ধন না পায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই আইনে আরো কিছু বিধিবিধান যুক্ত করছে যাতে পারবর্তী সময়ে পূর্বের রাজনৈতিক দল গুলো যাতে বাদ দেওয়া যায়। এটির মাধ্যমে সরকার আসলে ট্রায়াল দিচ্ছে যে এটি করলে জনগেন প্রতিক্রিয়া কি। তবে আমরা এটিকে গুরুত্ব দিচ্ছিনা। এখানে সরকারকে পতন না করলে আইন-কানুনের পরিবর্তন হবেনা।’

নুরুল হক বলেন, ‘যেখানে আমরা চাই সরকারের পতন বা এই অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা। সেখানে এই অগণতান্ত্রিক সরকারের এই নিয়োগ দ্বিধা আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবাদ করার অর্থহীন হবে বলে আমরা মনে করি।’

সে কারণে এ বিষয়টি নিয়ে আসলে ভাবছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিভাবে এই অগণতান্ত্রিক পরিবেশ থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা যায় এবং এই স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানো যায় আমরা এই মুহূর্তে আলোচনায় বা বিবেচনায় নিচ্ছি।’