২৫ জুলাই ২০২০, ১১:২১

রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বুয়েটে কেন ছাত্রদল কমিটি?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) গত ৭ অক্টোবর রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে গত বছর ১১ অক্টোবর বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আংশিক আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আসিফ হোসেন রচিকে আহ্বায়ক, ফয়সাল নূরকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আলী আহমদকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। এই আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন নওরোজ রহমান ইমন ও মুসাওয়ার আহমেদ শফিক।

শুক্রবার ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল এই আংশিক কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। আহ্বায়ক কমিটিকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ ওইসব কমিটির অধীনস্ত ইউনিট কমিটির তালিকা কেন্দ্রীয় সংসদে জমা দিতে বলা হয়েছে।

বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্রদল কেন কমিটি দিয়েছে- এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস রাজনীতির বাইরে থেকেছে ছাত্রদল। দলের হাইকমান্ড থেকে বারবার তাগেদা থাকা সত্ত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো সক্রিয় হতে পারেনি সংগঠনটি। গতবছর ডাকসু নির্বাচনের কারণে কিছুটা সক্রিয়া হতে দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। পর্দার আড়ালে থেকে যায় অন্যান্য ক্যাম্পাসে।

সংগঠনটির সাবেক একাধিক নেতা বলছেন, ছাত্র রাজনীতিতে বর্তমানে ছাত্রলীগ একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রদলের নতুন কমিটি না দেয়া, নেতা-কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা। তাই মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা নতুনভাগে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর ঢাবি ক্যাম্পাসের পাশাপাশি বুয়েট, ইডেনসহ রাজধানীর অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি।  

এদিকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও কেন ছাত্রদল কমিটি গঠন করেছে- বিষয়টি নিয়ে উদ্দিগ্ন বুয়েটি শিক্ষার্থীরা। কয়েজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, বুয়েটের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে মানছে না ছাত্রদল। ফলে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোও একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আবারও হুমকির মুখে পড়বে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জীবন। 

বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধের মধ্যে কেন কমিটি দেয়া হয়েছে- এ বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে বুয়েটের এই সিদ্ধান্ত শুরু থেকে মানতেন না বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, “বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির দরকার আছে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলার জন্য সেখানে ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন। তাই আমরা সেখানে কমিটি দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, “ওখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কে? সরকার করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করেছে। সরকার তো নিজেই নিয়ম মানে না। দিনের ভোট রাতে কেটে ক্ষমতা দখল করে আছে।”

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নয় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের প্রয়োজন উল্লেখ করে আবদুস সাত্তার বলেন, “বুয়েটে ঘটনায় যে সংগঠন দায়ী, সেই সংগঠনকে নিষিদ্ধ না করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছাত্র রাজনীতি। ছাত্রদল এ সিদ্ধান্তকে কখনোই মানেনি। ছাত্রদল মনে করে, দেশের এই পরিস্থিতিতে সেখানে কমিটি প্রয়োজন, তাই সেখানে কমিটি গঠন করা হয়েছে।’’

আবরার হত্যাকান্ডে বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকার পর বুয়েট কমিটি ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর কোন কমিটি দেয়নি সংগঠনটি। 

এদিকে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েট কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আবরার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে গত বছরের ১১ অক্টোবর উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বুয়েটে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমার নিজ ক্ষমতায় বুয়েটে সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি। এখন থেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে ভিসি বলেছিলেন, বুয়েট অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী শিক্ষক রাজনীতিও নিষিদ্ধ। বুয়েটের শিক্ষকরা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না।