১০ বছরে আবরারসহ ১৬২ হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগ, উইকিপিডিয়ায় তথ্য!
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদসহ ১০ বছরে অন্তত ১৬২ জনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া উল্লেখিত সময়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের হামলায় অন্তত দেড় হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। দেশের ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ সম্পর্কে এভাবেই পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে উইকিপিডিয়ার ইংরেজি ভার্সনে।
তবে এ তথ্য ভিত্তিহীন এবং ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে ছাত্রলীগ। ইন্টারনেটভিত্তিক মুক্ত বিশ্বকোষটিতে ‘ছাত্রলীগ তথ্যসন্ত্রাসের শিকার’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতারা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এটি জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত কাজ। এতে জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি তথ্য সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের পরিচয় দিতে গিয়ে উইকিপিডিয়ায় লেখা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বা অতীতের পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ বাংলাদেশের একটি ছাত্র সংগঠন, যা ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন।
এরপরই বিবরণে লেখা হয়েছে, ছাত্রলীগ বারবার নির্যাতন, নিপীড়ন, সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের কারণে আলোচনায় এসেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তাদের হাতে অন্তত ৩৩ জন খুন হয়েছে, গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত এক হাজার ৫০০ জন।
তবে মৃত্যুর সংখ্যা ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কয়েকগুণ বেড়ে যায় বলে উইকিপিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ সময়ে ১২৯ জন হত্যার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ২০১৮ সালেই হত্যার শিকার হয়েছে ৩১ জন।
এসব হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে সাধারণ মানুষ চেঞ্জ ডট অর্গ নামে ওয়েবসাইটে ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দিতে একটি পিটিশন শুরু করে। এছাড়া বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক বাংলা ট্রিবিউন সংগঠনটিকে ‘লজ্জার প্রতীক’ (the brand of shame) বলে আখ্যা দেয় বলে উইকিপিডিয়ার বিবরণে উল্লেখ করা হয়।
বিবরণে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনা একটি আলাদা অনুচ্ছেদে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যাকারী হিসেবে বুয়েট ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মেহেদি হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, মেহেদি হাসান রবিনসহ জড়িত কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া অপর একটি প্যারায় ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়েও বিবরণ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা এখনও বন্ধ হয়নি বলেও বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে দর্জি দোকানী বিশ্বজিৎ দাস হত্যায়ও ছাত্রলীগের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা শ্রেণীপেশার মানুষ উইকিপিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। এতে যে কেউ নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তথ্য সংযোজন ও বিয়োজন করতে পারেন। উইকিপিডিয়ার নির্দিষ্ট সম্পাদক প্যানেল পরে তা যাচাই ও অনুমোদন করেন।
এ প্রক্রিয়ায় উইকিপিডিয়ায় অনেক ভুল এবং অসম্পূর্ণ তথ্য থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের শিক্ষাঙ্গনসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের মারামারি ও সংঘর্ষে বিভিন্ন সময় বেশকিছু হতাহতের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সঠিক সংখ্যা কেউ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’র এ সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী ও বিশ্লেষনী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এটা জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে এক ধরণের তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হয়েছি আমরা। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা এগুলোর পেছনে কারা আছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরো জানান, ‘ইতোমধ্যে আমরা আমাদের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম গঠন করেছি। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন এবং এ কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এরশাদ চৌধুরী তার ফেসবুক ওয়ালে উইকিপিডিয়ার লিংকটি বসিয়ে লেখেন, ‘চক্রান্ত শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক আগে থেকেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিয়ে উইকিপিডিয়ার মিথ্যাচার। সবাইকে এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’