১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:১৮

৪০ লাখ টাকায় নেতা হয়েছেন ইবি ছাত্রলীগের সম্পাদক! (অডিও)

  © সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সাত মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এতে রাকিবুল ইসলাম রাকিব ৪০ লাখেরও বেশি টাকা দিয়ে নেতা হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এমনকি ওই টাকা আগামী ছয় মাসে ডাবল হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

কথোপকথনে হাইকোর্টের রায় কেনাবেচা হয় এবং যেমন খুশি তেমন রায় কেনা যায় এমন কথাও বলেছেন তিনি। ঈদুল আজহার পূর্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন নেতার সঙ্গে রাকিবের ওই কথোপকথন হয় বলে জানা গেছে। তবে তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

রাকিবের সঙ্গে অজ্ঞাত ব্যক্তির এই অডিওর মধ্যে ৪ মিনিটের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন আইডি থেকে অডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত রোববার সাধারণ সম্পাদক রাকিবের সঙ্গে ওই ব্যাক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভার নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

সেখানে ওই ব্যক্তিকে প্রার্থী যোগাড় করতে বলেন রাকিব। এক মিনিটের অডিও ফাঁস হলে ওইদিনই একটি ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি করেন রাকিবুল ইসলাম রাকিব। যার নং- ৪২৫।

ওই কথোপকথন থেকে জানা যায়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) মাহমুদুল হাসান নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে নেতা বানানোর পরিকল্পনা করা হয়। তাকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মাধ্যমে পাবিপ্রবির নেতা বানাতে পারবে বলে জানান রাকিব। রাব্বানী তাকে আঞ্চলিক নেতা বানানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।

রাকিব বলেন, ‘ঢাকা যায়ে খাটতে হয়। ঢাকা যেয়ে খাটতে বলতে কি, বহুত কাঠখড়ি আছে। তবে এখন আমার যে হিসাব নিকাশ, রাব্বানী ভাইয়ের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, এ আঞ্চলিক, এ বিষয়টা আমি যদি ভাইরে বলি, আমার কথা শুনবে। ভাই অলরেডি আমাকে বলেছেও আঞ্চলিক বিষয়গুলো দেখার জন্য।’

একপর্যায়ে মাহমুদুলকে নেতা বানাতে খরচ কেমন হতে পারে এমন আলোচনাও হয়। এ সময় রাকিব ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হতে চল্লিশ লাখের মত টাকা খরচ করেছে বলে অডিও থেকে জানা যায়।

অপর ব্যক্তি : তোমার (রাকিব) ইয়ে সম্পর্কে তুমি যেভাবে বলছিলে আরকি, বিভিন্নভাবে কমিটি ভাঙ্গা, গড়া, প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার খরচ টরচ দিয়ে তোমারতো একটা বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে গেছে।

রাকিব: হুমম.. হিউজ.. হিউজ..

অপর ব্যক্তি: সেই ফিগার তো আমি জানি, তা প্রায় মনে হয় চল্লিশের কাছে হবে।

রাকিব: হুমম।

রাকিব: না ভাই শোনেন কোনো ছেলেরে ইয়ে করতে গেলে... । এখন আমার যা খরচ হইছে এটা কোনো ব্যাপার না। ওইটা ছয় মাস গেলে সব ডাবল হয়ে যাবে, সমস্যা নাই। কিন্তু ওরে হচ্ছে ফোন দিতে কন আমি গিয়ে হচ্ছে দেখা করে আসবোনি।

অডিওতে জানা যায়, ইটি বি শাখা ছাত্রলীগের পূর্বের কমিভাঙতেও কাজ করেন রাকিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার জন্য কমিটি ভাঙা হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের মাধ্যমে কমিটি ভাঙা হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।

রাকিব : কমিটি যদি ভাঙে একজনের ওয়াইফের জন্য, বোর্ড করার জন্য। ম্যাথের বোর্ডটা স্থগিত করার জন্য। একজনকে করার জন্য আমরা কমিটি স্থগিত করি সিস্টেমে, সেটা আরেকটা লাইনে, এটা শোভনের লাইন। আমি তখন চিন্তা করলাম যে আমি একা নেতা হব?

গণিত বিভাগে শিক্ষক পদে আবেদন করেছিলেন ইবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। তবে চাকরি হয়নি তার। নিয়োগ বোর্ড নিয়ে একজন প্রার্থী হাইকোর্টে রিট করেছিলেন বলে জানা গেছে। অডিওতে টাকার বিনিময়ে হাইকোর্টের রায় কেনা বেচা হয় বলেও দাবি করেন রাকিব।

রাকিব : সাইফুলের ওয়াইফ সে ব্যপারটা কম বলেনি..অনেক টাকা লাগবে, ৩০ লাখ টাকা লাগবে। হাইকোর্টে রিট করতে হবে, রায় কিনে নিয়ে আসতে হবে। সে লাইনও আছে, টাকা লাগবে। হাইকোর্টে এমন এমন জায়াগায় এমন এমন লাইন আপনি যেভাবে রায় চাইবেন রায় সেভাবেই দেবে, টাকা লাগবে। এসব পথ আমি পাড়ি দিয়ে আইছি, তো রায় মায় সব কিনা যায়, সব রায় কিনা যায়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ আট মাস কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর গত ১৪ জুলাই রবিউল ইসলাম পলাশকে সভাপতি এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দিয়েছে ছাত্রলীগ।

এ বিষয়ে ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিক কথোপকথন আমার না। কণ্ঠ নকল করে এটি তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। ওখানে চল্লিশের কথা উল্লেখ আছে। লাখ বা হাজারের কথা উল্লেখ নেই। হাইকোর্ট নিয়ে এমন কোনো কথা আমি কারো সঙ্গে বলিনি।’

ইবি ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত কর্মী তন্ময় সাহা টনি বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে নেতৃত্বে আসলে আদর্শিক এবং যোগ্য কর্মীরা বঞ্চিত হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে নেতৃত্ব বাছাই করলে এমন নেতৃত্ব আসতো না। অডিওটি শোনার পর কোনো দালাল ছাড়া আদর্শিক কর্মী তাকে নেতা মানবে না।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অডিওটি আমিও শুনেছি। এই কথোপকথন সম্পর্কে আমার কোনো ধারনা নেই। রাকিবকে এর জন্য দলীয়ভাবে কারণ দর্শাতে নোটিশ করা হবে।

অডিও: সংগৃহীত