সাধারণ সম্পাদক পদে হিসাব পাল্টে দেবে শ্যামল
আসন্ন ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ২৭ বছরের দীর্ঘ বিরতির পরে আবার কাউন্সিলের ঘোষণায় প্রাণ ফিরেছে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সারাদেশের কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে আসবে আগামীর নেতৃত্ব। এ লক্ষ্যে চলছে কাউন্সিলরদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা।
চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। নিজের দিকে সমর্থন টানতে জেলায় জেলায় সফর করছেন প্রার্থীরা। পৌঁছে যাচ্ছেন কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে, রাজধানী থেকে অজপাড়াগাঁয়ে। দুই এক দিনের মধ্যে প্রচারণা শেষ করে ঢাকার পথে পা বাড়াবেন।
জানা যায়, সর্বশেষ ১৯৯২ সালে ছাত্রদলের সর্বশেষ (৫ম) কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ২৭ বছর পরে এবার আবারো হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত কাউন্সিল। এবারের কাউন্সিলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে তথা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ২৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সভাপতি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ৯ জন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯জন।
এবার সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীদের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাল্টে যাবে ভোটের হিসাব। এ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হিসেবে ঘুরে ফিরে আসছে ইকবাল হোসেন শ্যামলের নাম। এ পদে বাকিরা হলেন- মোঃ আমিনুর রহমান আমিন, শাহ নেওয়াজ, মোঃ তানজিল হাসান, মোঃ জাকিরুল ইসলাম জাকির, মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাইম), মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, শেখ আবু তাহের, সাদিকুর রহমান, কেএম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মোঃ জুয়েল হাওলাদার, মুন্সি আনিসুর রহমান, মোঃ মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মোঃ মশিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা, কাজী মাজহারুল ইসলাম।
ছাত্রদল ও বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন কাউন্সিলে সভাপতি পদের তুলনায় সাধারণ সম্পাদক পদেই বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। প্রার্থী বেশি থাকায় ভোটের মারপ্যাঁচে কেউ এগিয়ে যাবেন আবার কেউ পিছিয়ে যাবেন।
সূত্র জানায়, বরাবরের মতোই এবারের কাউন্সিলে আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক বলয় একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে সব হিসাব-নিকেশ পাল্টে দিয়ে নেতৃত্বে আসার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন শ্যামল।
জানা যায়, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাতি রাজিব আহসান যখন কারান্তরীণ ছিলেন তখন সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের তত্ত্ববধানে বিভিন্ন কমিটি করা হয়। উক্ত কমিটিতে নিজের একটা প্রভাব রয়েছে নরসিংদীর থেকে আসা আকরামের। আকরামের চেইন থেকে আসা শ্যামল সেদিক থেকে এগিয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন অনেকে।
স্পষ্টভাষী ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত শ্যামলের জন্ম নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায়। পিতা মৃত মো. গিয়াস উদ্দীন এবং মাতা দেলোয়ারা বেগম। ২০০৩ সালে নরসিংদী থেকে এসএসসি, ২০০৫ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ২০০৫-২০০৬ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে অনার্স এবং ২০১০ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। বর্তমানে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রফেশনাল মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছেন।
দাদা বাংলাদেশ পুলিশে এবং বাবা-মা সরকারি চাকরি করার সুবাদে একটি অরাজনৈতিক আবহের মধ্যেই বেড়ে ওঠা বলে জানান শ্যামল। আগে ছাত্রদলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মিছিলে অংশ নিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে প্রবেশ করেন শ্যামল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন সুমন বলেন, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে দলের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সরব উপস্থিতি ছিলো শ্যামলের। একারণেই আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়ে এ পর্যন্ত নিউ মার্কেট ও রমনা থানায় শ্যামলের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে।
কাউন্সিল নিয়ে সার্বিক বিষয়ে ইকবাল হোসেন শ্যামল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কাউন্সিল উপলক্ষে ইতোমধ্যে আমরা প্রায় সারা বাংলাদেশে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করেছি। তাদের কাছে ভোট চেয়েছি। কাউন্সিল এর মাধ্যমে কেন্দ্র ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তথা গোটা বিএনপি পরিবার আজ উজ্জীবিত। তবে আমাদের ব্যথা লাগে আমাদের নেত্রী আমাদের মমতাময়ী মাকে আমাদের মাঝে পাচ্ছি না। তা না হলে এই উৎসব আমাদের জন্য একটা বাড়তি উদ্যম হতে পারতো।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে শ্যামল বলেন, স্বাধীনতার মহান ঘোষক বীর মৃক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ' এবং 'উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী' রাজনৈতিক আদর্শকে ধারণ করে ছাত্রসমাজ তথা রাষ্ট্রের সর্বত্র এর প্রচার করা। ছাত্রসমাজের যৌক্তিক দাবি আদায়ের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা এবং গণতন্ত্র তথা মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সামিল হওয়া।
নিচের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলে, আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতার জন্য নিশ্চিতের জন্য নিজেদের মধ্যে জবাবদিহিতা তৈরি করবো। পাশাপাশি সহাবস্থানের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে জোর প্রচেষ্টা চালাবেন বলে জানান।