১৯ আগস্ট ২০১৯, ১০:৩৭

কারা হচ্ছেন ছাত্রদলের কাণ্ডারি, নজর বাছাইপর্বে

দীর্ঘ ২৭ বছর পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। ফলে প্রায় তিন দশক পর ‘প্রেস রিলিজ কমিটি’, ‘পকেট কমিটি’, কিংবা ‘সিণ্ডিকেটের কমিটি তকমা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে বিএনপির এই সহযোগী সংগঠনটি। দীর্ঘদিন পর নতুন নিয়মে কমিটি হতে যাওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সংগঠনের প্রকৃত ত্যাগী নেতারা।

জানা গেছে, এবার ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপটটা কিছুটা ভিন্ন। এতদিন সংগঠনটির নেতা হতে সুনির্দিষ্ট কোনো শর্ত না থাকলেও এবার কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের এই কাউন্সিলে প্রার্থীতার ক্ষেত্রে নতুন শর্তারোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে শীর্ষ দুটি পদে লড়তে হলে প্রার্থীদের অবিবাহিত হওয়াসহ যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে তাতে শঙ্কায় পড়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক অনেকেই।

আবার মনোনয়নপত্রের বাছাইপর্বে তারা যদি পার পেয়ে যান তাহলে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বিরা কিংবা তাদের সমর্থক কেউ কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে এই ইস্যুতে রিট করারও প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ২০০০ সালের আগে এসএসসি পাস করেছেন এমন কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না এমন শর্তের সাথে এসএসসির রেজিস্ট্রেশন ১৯৯৮ সালের আগে নয়, এমন শর্ত যোগ করেছেন কাউন্সিলের আয়োজকরা। ফলে ছাত্রদলের কাণ্ডারি হতে ভোটযুদ্ধে শামিল হওয়ার আগে বড় ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে বাছাইপর্ব পার হওয়াও।

ছাত্রদলের কাণ্ডারি হতে কে কোন পদে লড়ছেন, লড়াইয়ের জোর আসলে কোথায়? আগামী ১৪ই সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের আসন্ন ষষ্ঠ কাউন্সিলে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের কেউই নিজ ইউনিট কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া তৃণমূলে খুব বেশি পরিচিত নন। অথচ তাদের মধ্য থেকেই এবার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন ছাত্রদলের।

এ অবস্থায় কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে অনেকেই ছুটছেন তৃণমূলে। অনেকেই বিভিন্ন জেলা সফর করেছেন এরইমধ্যে। কিন্তু আগে থেকে সেভাবে পরিচয় কিংবা একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। ভোটারদের মন জয়ে যেমন নিজেকে তুলে ধরছেন।

ছাত্রদলের শীর্ষ দুই পদ পাওয়ার দৌড়ে যারা

এছাড়া যে ‘ভাইয়ের গ্রুপ’ করেন কিংবা ভোটার যদি একই ভাইয়ের আনুকূল্যে নেতা হয়ে থাকেন সে সুবিধা কাজে লাগাচ্ছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার আঞ্চলিকতা ব্যবহার করে ভোট চাইছেন। কেউবা আবার বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের সহায়তা চাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

তবে যারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যারা ফরম তুলেছেন তাদের কারও কারও বিষয়ে বিবাহিত হওয়ার জোর গুঞ্জন রয়েছে। এমনকি তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। এ অবস্থায় ফরম তোলা অনেকেই শর্তের কারণে বাদ পড়বেন বলে জানা গেছে।

আসলেই কি সিন্ডিকেটমুক্ত হচ্ছে ছাত্রদল? এমন প্রশ্নও রয়েছে। বিশেষত ইলিয়াস আলী গ্রুপ এবং সুলতান সালাউদ্দিন  টুকু গ্রুপ। রয়েছে ভোটের ফল পাল্টে দেয়ার ভয়ও! তবে ছাত্রদলের অনেক নেতা মনে করছেন, এবার কমিটি নিয়ে কোন ধরণের ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা বিএনপি এবং ছাত্রদলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে। সিণ্ডিকেট ও ভাইমুক্ত এবং সবার নিকট গ্রহণযোগ্য নেতাদের হাতেই ছাত্রদলের নেতৃত্বের ভার তুলে দেওয়া উচিৎ বলে তারা মনে করেন।

এ ব্যাপারে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সবার সমর্থন পেতে ইতিমধ্যে তৃণমূলে যোগাযোগ করেছি। তারা সবাই খুবই আন্তরিক। আমাদের চেয়ারম্যান জেলে রয়েছেন। এ অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে সবাই আস্থা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’

অপর সভাপতি প্রার্থী হাফিজুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। সবাইকে বলেছি, দলের এই দুঃসময়ে যোগ্য লোকের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দিতে। এছাড়া সিণ্ডিকেট কিংবা ভাইতন্ত্র বলে কিছু নেই। সবাই চেয়ারম্যান এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর আস্থা রাখবেন বলেই বিশ্বাস করি।’

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয় পদের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আশরাফুল আলম ফকির লিংকন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘নির্বাচিত হলে চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকব। চেয়ারম্যানকে মুক্ত করতে যা করার করব। কাউন্সিলে সবার সমর্থন পেতে যোগাযোগ চলছে। আশা করি, সবাই আমার ওপর আস্থা রাখবেন।’ 

পুনঃতফসিল অনুযায়ী, আজ সোমবার ও আগামীকাল মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হবে। ৩১ আগস্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২২-২৬ আগস্ট যাচাই-বাছাই শেষে ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটের জন্য প্রচার চালাতে পারবেন।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।