টিএসসিতে জড়ো হচ্ছেন ৩৫ প্রত্যাশীরা, বড় আন্দোলনের পথে
অনেক দিন ধরে টানা প্রস্তুতি শেষে আজ মাঠে নামছেন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোনকারীরা। ইতোমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন তারা। একটু পরই কর্মসূচি শুরু হবে। এতে কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী অংশ নিতে পারেন বলে ধারণা করছেন আন্দোলনকারীরা। শুধু তাই নয়, কর্মসূচিতে ডাকসু ভিপি-জিএসরাও একাত্মতা করে আসতে পারেন বলে তারা মনে করছেন।
তারা বলছেন, এবারের কর্মসূচি অনেকটা ভিন্ন। দীর্ঘদিন পর সবার অংশগ্রহণে এমন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সুতরাং বড় কিছু হবে। একটি সূত্র বলছে, আজকের মাধ্যমেই বড় আন্দোলনের পথে হাঁটবেন ৩৫ আন্দোলনকারীরা। সে হিসেবে ঘোষণা আসতে পারে নতুন কিংবা টানা কর্মসূচির। উপস্থিতি ঠিক শাহবাগ এলাকাতেও অবস্থান নিতে পারেন সংশ্লিষ্ট চাকরিপ্রার্থীরা।
তথ্যমতে, আজকের কর্মসূচির জন্য নানাভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। অবশ্য এক মাস আগেও কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে ৩৫চাই আন্দোলন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। তবে পরে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ঐক্যের ডাক দেন সবগুলো গ্রুপ। সব পক্ষ এক হয়ে নতুন করে কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটির মুখপাত্র হয়েছেন সঞ্জয় দাস ও ইমতিয়াজ হোসেন। এছাড়া সমন্বয়ক হয়েছেন- এম এ আলী ও হারুন অর রশিদ। ফলে এবার আন্দোলনে সফলতার ব্যাপারে আশাবাদী চাকরিপ্রার্থীরা।
জানতে চাইলে ইমতিয়াজ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা বড় আন্দোলনের পথে যাচ্ছি। তার দাবি, এবার খুব ভালো প্রচারণা চালানো হয়েছে। সবাই আন্দোলনের ব্যাপারে ইতিবাচক। বেশ কয়েকদিন ধরেই এ নিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এজন্য সবাই আসবে বলেই আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। এবার কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী আসবেন বলে আশা করছি। দাবি আদায় না হওয়ায় পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি টানা পালন করার পরিকল্পনা করছি। আশা করি, আমরা এবার সফল হব।
টানা কয়েক বছর ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়েছে ৩৫-এর সব চাওয়া-পাওয়া। তারপরও আন্দোলন থেকে সরে আসেননি আন্দোলনকারীরা। সাংগঠনিকভাবে কিছুটা গুছিয়ে উঠে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এ প্রক্রিয়ায় রয়েছেন আন্দোলনকারীদের সংগঠক ফেরদৌস জিন্নাহ লেলিন, সঞ্জয় দাসসহ আরও অনেকে।
জানা গেছে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন সফলতার মুখ দেখলেও এখনো চলছে ‘৩৫ চাই’ আন্দোলন। চলতি বছরে এসেও কয়েক দফা কর্মসূচি পালন ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে গ্রেফতারের ঘটনাও। এরইমধ্যে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় আন্দোলন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিলো।
তবে সেই দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৩৫ চাই আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তবে সংসদে নাকচ হয়ে যাওয়ায় নতুন কর্মসূচিতে সরকারের বাঁধা আসতে পারে বলে আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অনেকে মনে করছেন। তবে এতে তারা বিচলিত নন বলেও জানিয়েছেন।
ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘আসলে আন্দোলন করতে গেলে বাঁধা আসবেই। তাছাড়া, সরকার চাচ্ছে আমরা আন্দোলন করে দাবি আদায় করি। সে লক্ষেই আমরা এবার বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এছাড়া দুদিন আগেই আমরা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরে সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি দাবি মানার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আর আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে আর কোন গ্রুপ নেই। বিচ্ছিন্ন আন্দোলন করেও আসলে কোনো লাভ হবে না। সে কারণে সবাই মিলে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত ২৫ এপ্রিল চাকরি প্রত্যাশীদের বহুল কাঙ্ক্ষিত চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে ওঠে। তবে তা নাকচ করে দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, পড়াশোনা শেষ করার পর একজন ছাত্র অন্তত সাত বছর সময় পেয়েছে। এটা অনেক সময়। তাছাড়া এর আগে চাকরির বয়স ২৫ বছর ছিল, সেখান থেকে ২৭ ও পরবর্তীতে ৩০ বছর করা হয়। সে হিসেবে এখন বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।
এ সময় তিনি প্রস্তাব উত্থাপনকারী সংসদ সদস্যকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহবান জানান এবং প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু সেটি প্রত্যাহারে রাজি না হলে কণ্ঠভোটের আয়োজন করা হয়। কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। মূলত প্রস্তাবটি পাস না হওয়াতেই তীব্র হতাশ হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।