নুর তোর কী হয়? ওর জন্য কেন মাইর খাচ্ছিস
বগুড়ায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় ওঠেছে। সোমবারের ওই হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নুরুরহক নুর গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া সংগঠনটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান, রাতুল সরকার, মশিউর রহমান সহ আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। তারও একদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গেলে অনুষ্ঠানস্থলে তালা ঝুলিয়ে দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এদিকে বগুড়ায় যখন নুরের ওপর হামলা হয়, তখন তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাতুল সরকার। সেই হামলা থেকে বাঁচাতে নিজেই নুরকে জাড়িয়ে ধরেন। চতুর্দিক থেকে নুরের ওপর সেই আঘাত এসে পড়ে রাতুলের ওপর। একপর্যায়ে নিজেই রক্তাক্ত হন রাতুল। ঘটনার সময় বারবার হামলাকারীরা প্রশ্ন করেন, কে তুই? নুর তোর কি হয়? ওর জন্য কেন মাইর খাচ্ছিস?
সেই ঘটনার বর্ণনা ও প্রশ্নের জবাব দিয়ে নিজের ফেসবুকে মঙ্গলবার একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন রাতুল। স্ট্যাটাসে রাতুল লেখেন— ‘বগুড়ায় জঙ্গি লীগের সন্ত্রাসীরা নুরকে যখন আক্রমণ করে, প্রায় পুরোটা সময় নুরকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিলাম। আর ওরা বারবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছিল, ‘ও কেন সরে না? ওকে সরাও। কে তুই? নুর তোর কী হয়? ওর জন্য কেন মাইর খাচ্ছিস? আমি চাই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনারাই পৌঁছে দেন ওইসব জঙ্গি লীগের কাছে।’
নুরকে জড়িয়ে ধরে বাঁচানোর বর্ণনা দিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আবু সাইদ নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘এটাই ভালোবাসা। ভিপি নুরের ওপর উপর্যুপরি লাথি ঘুসির সময় নুরের শরীরের ওপর শুয়ে পড়ে নিজের শরীর পেতে দিয়ে নুরকে কোলে তুলে নেন প্রিয় সহযোদ্ধা ছাত্রসমাজের সাহসের বাতিঘর রাতুল সরকার।
পড়ুন: ভাইরাল হওয়া এই ছবি ও তথ্য— সবই ভুয়া!
পড়ুন: কেন আমরা পাল্টা আঘাত করি না?
হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রোববার বিকালে ভিপি নুর সহ অন্যান্যরা উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে অবস্থান করছিলেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পাবলিক লাইব্রেরির মূল ফটক দিয়ে ঢুকে অতর্কিতভাবে তাদের উপর হামলা চালায়। প্রথমে জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মো. মুকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকবির ইসলাম খান এবং বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ দাঁড়িয়ে থাকা ভিপি নুর সহ অন্যদের মারধর করতে শুরু করে। এসময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস পাশে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরাও মারধরে অংশগ্রহণ করে। মারধরের একপর্যায়ে গুরুতর আহত ভিপি নুর মাটিতে লুটে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। এছাড়া ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ যুগ্ম-আহবায়ক ফারুক হাসান, রাতুল সরকার, মশিউর রহমান সহ আরও কয়েজন আহত হন।
পড়ুন: বিতর্কিত ১৯ জনের নাম প্রকাশ নিয়ে কী বললেন শোভন?
সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে বগুড়ায় হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।’ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, ডাকসুর সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন, পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান, মশিউর রহমান প্রমুখ। ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর এ সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক।