২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৪৯

দীপু দাস ও আয়শা হত্যাসহ সারাদেশে মবের বিচারের দাবিতে ঢাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

ঢাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ-সমাবেশ  © সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যা ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন দিয়ে তার কন্যা শিশু আয়েশাকে পুড়িয়ে হত্যাসহ দেশব্যাপী মবসন্ত্রাসের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে ছাত্রদল।

রবিবার ( ২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে বিক্ষোভ মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়। 

এ সময় তারা ‘উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’; ‘দীপু দাস পুড়ে মরে, প্রশাসন কী করে’; ‘মব সন্ত্রাসের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।  

সমাবেশে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা বারবার এই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা যে বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, যে বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে, মতাদর্শ চর্চা করবে, কর্মস্থলে থেকে দেশকে এগিয়ে নেবে, সেই বাংলাদেশ আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে গুজব, উসকানি ও মব সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল আপনারা দেখেছেন— আমাদের সহযোদ্ধা ওসমান হাদির দাফনস্থল নিয়েও কীভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। সচেতন ছাত্রসমাজ ও জনগণ সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। এই গুজব থেকেই ধীরে ধীরে মব তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, এই উগ্র ধর্মান্ধতা, এই ফিতনা ও মানসিক বিকৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আপনার, আমার, আমাদের সবার নৈতিক ও নাগরিক দায়িত্ব। শুধু প্রতিবাদ করলেই দিপুচন্দ্র দাস কিংবা শিশু আয়েশা আক্তারের পরিবার তাদের আপনজনকে ফিরে পাবে না এটা আমরা জানি। ৫ আগস্ট ঘটেছিল এই দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা, চলাফেরার অধিকার ও ধর্ম পালনের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য। কিন্তু যদি আমরা দেখি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে কেউ ফ্যাসিবাদের মতোই দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে, তাহলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চুপ করে থাকবে না তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।"

এ সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, শুরুতেই শহীদ ওসমান হাদির রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে দাবি জানাই আজকের মধ্যেই তার হত্যাকারীরা কারা, কোথায় রয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে।

তিনি বলেন, এই ঘটনার মধ্যেই আমরা লক্ষ্য করেছি—বিগত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে দেশে যে মবতন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা চলমান, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় একটি বিশেষ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা, বট বাহিনী এবং ধর্মের অপব্যবহার করে রাজনীতি করছে। এই অপশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে কোনো নিরপরাধ পোশাক শ্রমিক বা সাত বছরের শিশু আয়েশা আক্তারকে দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে। এই বাংলাদেশ আমরা চাইনি। 

তিনি আরও বলেন, জুলাই–আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছে, তারা কখনো কল্পনাও করেনি— এই দেশে ওসমান হাদিকে হত্যা করা হবে, দিপুচন্দ্র দাসকে পুড়িয়ে মারা হবে, আর শিশু আয়েশা আক্তারকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হবে। আমরা এই অমানবিক, বিকৃত ও দ্বিচারী মানসিকতার তীব্র ধিক্কার জানাই। এরা মানবিক নয়, এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই। এই অপশক্তি একটি বিশেষ গোষ্ঠীর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। এই উগ্রবাদী সংস্কৃতি, এই মব কালচার প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সর্বশক্তি নিয়োগ করবে—ইনশাআল্লাহ।