গাইবান্ধায় এনসিপি কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের তালা
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাইবান্ধা জেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে তীব্র বিভাজন ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতাকর্মীরা দলের গাইবান্ধা জেলা কার্যালয় তালাবন্ধ করে দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব বায়জিদ বোস্তামী জিমের নেতৃত্বে একদল কর্মী এ অভিযান চালান। তাদের সঙ্গে ছিলেন- সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক অতনু সাহা, আব্দুল্লাহ জিসান ও মেহেদী হাসানসহ আরও অনেকে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির আদেশে গাইবান্ধায় ৫২ সদস্যের একটি সংশোধিত আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা খাদেমুল ইসলাম খুদিকে জেলা আহ্বায়ক করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তই বিতর্কের মূল কারণ।
ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, গাইবান্ধা জেলা কমিটি গঠনের পুরো প্রক্রিয়াই ছিল অস্বচ্ছ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দলীয় আদর্শ ও তৃণমূল কর্মীদের প্রত্যাশার বিপরীত। তারা দাবি করেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগপন্থি প্রভাবশালী মহলের দোসর, সুবিধাবাদী চরিত্র এবং সয়াবিন রাজনীতির প্রতিনিধিসহ একাধিক বিতর্কিত ব্যক্তিকে এই কমিটিতে অযৌক্তিকভাবে পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে। এতে এনসিপির ত্যাগী ও প্রকৃত কর্মীদের সরাসরি অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে তাদের মত।
তাদের বক্তব্য, মোটা অঙ্কের টাকা, তদবির ও প্রভাব খাটিয়েই এই কমিটি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই কমিটিকে তারা আওয়ামী লীগপন্থী, জোকারসুলভ ও দলীয় আদর্শবিরোধী ব্যক্তিদের আশ্রয়স্থল বলে বর্ণনা করেন।
বিক্ষুব্ধরা আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও রক্তদানকারী মূল নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির গাইবান্ধা জেলা কমিটিতে জাসদের কেন্দ্রীয় নেতাকে আহ্বায়ক করা জুলাই আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী যোদ্ধাদের সাথে সরাসরি বেইমানি বলে তারা মনে করেন।
তারা স্পষ্ট ভাষায় জানান, অনিয়ম, আপসকামী রাজনীতি ও দলে অনুপ্রবেশকারীদের সাথে কোনো অবস্থাতেই আপস করা সম্ভব নয়। তাই এই অগণতান্ত্রিক, অস্বচ্ছ ও বিতর্কিত সংশোধিত কমিটির সাথে তাদের কোনো রাজনৈতিক বা নৈতিক সম্পর্ক নেই বলেই তারা দাবি করেন। এ অবস্থায় দলীয় কার্যালয় তালা ঝুলিয়ে রেখে তারা তাদের প্রতিবাদ ও অবস্থানকে স্পষ্ট করেছেন।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনা দলটির অভ্যন্তরীণ সংকট এবং জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা তরুণ কর্মীগোষ্ঠীর সাথে দলীয় উপদলের সম্পর্কের টানাপোড়েনকে আবারও প্রকট করে তুলেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।