২২ ঘণ্টা পর ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের আন্দোলন স্থগিত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ মে ২০১৯, ০৯:৩৪ AM , আপডেট: ২০ মে ২০১৯, ০৯:৫৮ AM
আওয়ামী লীগের চার জ্যেষ্ঠ নেতার আশ্বাসে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। আজ রবিবার (১৯ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
কর্মসূচি স্থগিতের বিষয় নিশ্চিত করে গত কমিটির প্রচার সম্পাদক ও আন্দোলনকারী সাঈফ বাবু বলেন, ‘আমাদের দাবি মানা হয়েছে, তাই আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি। আমাদের দাবি ছিল, বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে যোগ্যদের স্থান দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও দুটি হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার করতে হবে।’
এর আগে পদবঞ্চিতদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলের শীর্ষ চার নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছিলেন ছাত্রলীগের রোকেয়া হলের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা পারভীন, শামসুন নাহার হলের সভাপতি নিপু ইসলাম তন্বী, ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা সিকদার, গত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাঈফ বাবু, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের সভাপতি শ্রাবণী শায়লা, জসীম উদ্দীন হলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান।
বৈঠক শেষে রাজু ভাস্কর্যে এসে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে মোল্লা কাউছারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এ সময় বিভিন্ন ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন পদবঞ্চিতদের উদ্দেশে বলেন, ‘পদের লোভ না করে দল ও দেশের জন্য কাজ করতে হবে। ছাত্রলীগ কোনো স্থায়ী জিনিস না, একটা চলমান প্রক্রিয়া। ছাত্রলীগ করতে না পারলে যুবলীগ বা আওয়ামী লীগ করবেন। রাজনীতির একটা চর্চা থাকতে হবে। এভাবে এটা কিন্তু রাজনীতি চর্চা না। সবার প্রতি অনুরোধ, কাদা ছোড়াছুড়িটা আর না করি, ছাত্রলীগের সুনামটা আর নষ্ট না করি। কালকে থেকে একসঙ্গে পথচলে দু–এক দিনের মধ্যে বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করি।’
তাঁদের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) নিজেদেরও কিছু ভুল ছিল বলে উল্লেখ করে শোভন বলেন, ‘বিতর্কিত ১৭টি পদ আপাতত শূন্য হওয়ার পথে। এখানে দু-একজন থাকতে পারে, যাদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী, মাদক, বিবাহ ও চাকরির বিষয় নেই, কিন্তু সে প্রমাণ করতে পেরেছে, তার বয়স ত্রিশোর্ধ্ব নয়৷ এ রকম দু-একটি ঘটনা ঘটলে তা আমাদের মাধ্যমে না, নেত্রীর মাধ্যমেই আসবে৷ কিন্তু ১৭টি পদের ম্যাক্সিমাম বিলুপ্তির পথে। সেই জায়গাগুলোয় পুনর্বিন্যাসের একটা সুযোগ এসেছে। আপনাদেরকে আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। পার্টির প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। ছাত্রলীগের কর্মী হলে ত্যাগ করতে শিখতে হবে।’
সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আপা প্রথমত আমাদের সবাইকে এক ছাতার নিচে দেখতে চান। আপা দ্বিধাবিভক্ত কারও সঙ্গে কথা বলবেন না। আপা বলেছেন, আগে একই টেবিলে বসে দেখান ছাত্রলীগ একটা পরিবার, আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ পরিবার ধারণ করছি, তারপর তিনি আমাদের সব কথা শুনবেন ৷ কিছুদিন আগে আপার চোখের অপারেশন হয়েছে। আপা একটু বেটার ফিল করলে সবার সঙ্গে কথা বলবেন।’
ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর গত সোমবার সংগঠনের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়৷ ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান ৷ এতে কয়েকজন নারী নেত্রীসহ ১০ থেকে ১২ জন আহত হন।
গত বুধবার ছাত্রলীগের কমিটি থেকে ‘বিতর্কিতদের’ বাদ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেন৷ এরপর কমিটি ও মধুর ক্যান্টিনের সোমবারের হামলার ঘটনা নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা নিরসনে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে শনিবার রাতে টিএসসিতে আলোচনায় বসেছিল পদবঞ্চিতদের ১২ জনের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের অভিযোগ, সেই আলোচনার সময় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক এবং ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক লিপি আক্তারকে বাজে মন্তব্য করলে তিনি এর প্রতিবাদ জানান৷ এর জেরে সেখানে উপস্থিত রাব্বানীর কর্মীরা লিপিসহ পদবঞ্চিত পক্ষের কয়েকজন নারী নেত্রীসহ সবাইকে মারধর করেন।