১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৩১

গুম-খুনে অভিযুক্তদের সেইফ এক্সিট দেওয়ার প্রশ্নে ইনকিলাব মঞ্চের ৫ দফা দাবি 

ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে ইনকিলাব মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি

জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার্থে গুম-খুনে অভিযুক্ত ২৮ সামরিক কর্মকর্তাদের সেইফ এক্সিট দেয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে ও অতিদ্রুত দোষীদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করাসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। 

শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় প্লাটফর্মটি। 

এসময় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী বলেন, গুম কমিশনের প্রকাশিত ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে ভয়াবহ সব তথ্য। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার মতো নদীগুলো গণকবরে পরিণত হয়েছিল— এটা আমরা জানতাম না। আমার বিশ্বাস কেউ এক বসাতে গুম কমিশনের প্রকাশিত ডকুমেন্টারিটা দেখে ঠিক থাকতে পারবে না। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্মি মানে কী? এই ২৮ জন, ২৫ জন, ৩০ জন সব থেকে লোভী দিল্লির সেবাদাসী হাসিনার গোলাম। পুরো বাংলাদেশ আর্মিকে ধ্বংস করে দিয়েছ পিলখানা হত্যাকাণ্ড। পিলখানা হত্যাকাণ্ড যারা স্বচক্ষে দেখেছেন এমন অনেকে সাক্ষী দিয়েছেন যে, হিন্দিভাষী অফিসাররা হত্যাকাণ্ডের সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছিলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে তাদেরকে দুইদিন ধরে হত্যা করা হয়। 
তিনি আরও বলেন, আমার সেনাবাহিনীকে যখন হত্যা করে তার লাশ ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে তখন তারা হাসিনার সাথে গণভবনে বসে প্ল্যান করছে চা, কফি খাচ্ছে এবং হাসিনা তাদের শক্তি নিয়ে থ্রেড করেছে বাংলাদেশের জুনিয়র অফিসারদেরকে।

হাদী বলেন, গুম কমিশনের এমন ভয়াবহ একটা ডকুমেন্টারি আসার পরেও বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপি, জামাত ইসলামী তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে এই এজেন্সির বিরুদ্ধে আমরা কোন প্রতিবাদ দেখি নাই। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আদালত যদি কোন ঐতিহাসিক কাজ করে থাকে সব থেকে সাহস নিয়ে সেই পাঁচটা কাজের একটা কাজ হবে এই জেনারেলদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা। 

ইনকিলাব মঞ্চ নেতা আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, গুম কোন হাস্যকর বিষয় নয়। কারণ, যে পরিবারের যে সদস্য গুম হয়েছে একমাত্র সেই পরিবারগুলোই বলতে পারে যে, গুমের যন্ত্রণা আসলে কতটা কঠিন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি বেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুম কমিশন গঠন হয়েছে। যা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্ষমতা অর্জন করে হয়েছে। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে গুম কমিশনের সব সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানান। 

তিনি বলেন, গুম কমিশন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে যে রিপোর্ট দাখিল করেছে তার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং আমরা জানতে পেরেছি যে, তাদেরকে সেইফ এক্সিট দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যারা এই গুম ও খুনের সাথে জড়িত ছিল তাদের কয়েকজন ইতোমধ্যেই পালিয়ে গিয়েছেন। যারা বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে চারজন গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্বপদে বহাল ছিল। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকারের বয়ান অনুযায়ী বাংলাদেশে গুম-খুন এই ধরনের কোন ঘটনাই ছিল না। তাদের দাবি মতে, তারা যেটা সবসময় স্ট্যাবলিশ করার চেষ্টা করেছে, সেটা হচ্ছে পারিবারিক বিরোধ কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মণ মালিন্য এই ব্যাপারগুলোকে নিয়ে গুমের মত একটা জঘন্য কাজকে তারা এই বর্ণনাগুলোর মধ্য দিয়ে মিথ্যাচার করেছে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ কোনো গুম এবং হত্যার যে রাজনীতি চলে রাষ্ট্রীয় মদদে সেটা তারা দেখতে চায় না। 

সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি জানায় প্লাটফর্মটি। সেগুলো হল- অভিযুক্ত জেনারেলদের অভিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে; ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে; পিলখানা, গুম কমিশন ও প্রসিকিউশনের নিরাপত্তা; পিলখানা কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে এবং যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বিচার নিশ্চিত করতে হবে।