০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৩০

শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের আহ্বান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোগো  © সংগৃহীত

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সাথে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। অভ্যুত্থানোত্তর নতুন বাংলাদেশে এখনো শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠিত না হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেও মনে করছেন সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইমাম।

আজ রবিবার (৫ অক্টোবর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ ৫ অক্টোবর ২০২৫, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের সম্মান জানাতেই ইউনেসকো ঘোষিত এ দিবসটি ১৯৯৪ সাল থেকে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজকের এই দিনে সমাজ গঠনের প্রধান কারিগর শিক্ষকদের অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে। কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এক যৌথ বিবৃতিতে সকল শিক্ষকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।’

এতে বলা হয়, ‘২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেই অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার ছিলেন আমাদের শিক্ষক সমাজ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বাহিনী যখন দেশব্যাপী ছাত্র হত্যায় মেতে উঠেছিল, তখন কিছু শিক্ষক, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ ছাড়া বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনের গুম-খুনের বিরুদ্ধেও তারা ছিলেন সোচ্চার। এই শিক্ষকরাই প্রমাণ করেছেন, শিক্ষকতা কেবল পাঠদানের পেশা নয়; এটি বিবেক, মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্বাস করে, তাদের এই সাহসী ভূমিকা আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’

বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আওয়ামী লীগের দলীয়করণ নীতি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বিগত দেড় দশকের শাসনামলে শিক্ষক নিয়োগে দলীয় প্রভাব, প্রশাসনিক কাজে পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম আমরা প্রত্যক্ষ করেছি; যা শিক্ষার পরিবেশকে যেমন কলুষিত করেছে, তেমনি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকেও ব্যাহত করেছে। এর ভুক্তভোগী হয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ই।’

কিন্তু জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের সামনে এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা তৈরি করেছে, উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ‘এই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষাও ছিল শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার, যেখানে শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থাও গড়ে উঠবে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে লক্ষ করছি, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে অভ্যুত্থানের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কর্তৃক বিভিন্ন ন্যায্য দাবিতে নানা আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করছি। অভ্যুত্থানোত্তর নতুন বাংলাদেশে এখনো শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠিত না হওয়া এবং এ ধরনের বিরাজমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিলম্বে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার এবং শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান, মর্যাদা ও স্বীকৃতি নিশ্চিতে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার আহ্বান জানাচ্ছে।’