০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১৮

ডাকসুসহ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি ও জিএস ছিলেন যে ছাত্রনেতা

মাহমুদুর রহমান মান্না  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা মূলধারার বাইরে থেকেও আলোচনায় থাকেন সবসময়। তাদের মধ্যে একজন রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না। বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় রাজনীতির পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা মান্না দেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছেন। তিনি একমাত্র ছাত্রনেতা, যিনি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদে নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন।

১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন মান্না। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সারা দেশে আলোড়ন তোলা এই তরুণ তখন থেকেই ছাত্রদের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেন।

পরবর্তীতে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অল্প সময়ের মধ্যেই এখানকার ছাত্রদের মধ্যেও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার নেতৃত্বগুণ, সাহসী অবস্থান ও সাংগঠনিক দক্ষতার ফলে পরপর দুইবার ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে বিরল রেকর্ড গড়েন। ডাকসু নির্বাচনে ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে এবং ১৯৮০ সালে বাসদ ছাত্রলীগ থেকে তিনি ভিপি নির্বাচিত হয়েছিন। ডাকসুর ইতিহাসে একমাত্র দুইবার নির্বাচিত ভিপিও তিনি।

আরও পড়ুন: ডাকসু: ছাত্রীদের পছন্দ ‘ম্যাচিউরড ক্যান্ডিডেট’

মাহমুদুর রহমান মান্নার জন্ম ১৯৫১ সালের ১ নভেম্বর, বগুড়া শহরের চকলোকমান এলাকায়। শৈশব কেটেছে সূত্রাপপুর মালতিনগর ফ্রি প্রাইমারি স্কুল ও বগুড়া জেলা স্কুলে। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এখানে আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি পাস করেন। একই বছর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন মান্না। অল্প বয়সেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হন। তিনি ছিলেন কৃতী বক্তা ও লেখক, সাংস্কৃতিক সংগঠক এবং বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি।

মুক্তিযুদ্ধের পরে মান্না যোগ দেন জাসদে। ১৯৭২ সালে চাকসুর জিএস নির্বাচিত হয়ে জাতীয় রাজনীতির আলোচনায় আসেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করেন।

জাসদ ভেঙে বাসদ গঠিত হলে মান্না তাঁদের সঙ্গেও যুক্ত হন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সময়ে তিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

এরপর জনতা মুক্তি পার্টির মাধ্যমে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। দলটি ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একীভূত হলে মান্না আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত হন। তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সময়ে সংস্কারপন্থী অবস্থান নেওয়ায় ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন। ২০০৯ সালের কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ হারানোর পর তার রাজনৈতিক অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: ডাকসু যার পক্ষে‌ই যাক, রাজপথ আমাদের পক্ষেই থাকবে: মেঘমল্লার বসু 

২০১২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নাগরিক ঐক্য। প্রথমে এটি নাগরিক আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও পরে রাজনৈতিক দলে রূপ নেয়। বর্তমানে তিনি এ দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক ধারার কণ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

ছাত্রজীবনে চাকসু ও ডাকসুর ইতিহাস গড়া মাহমুদুর রহমান মান্না আজও রাজনীতিতে সক্রিয়। গণতন্ত্র, সুশাসন ও নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে তিনি সরব কণ্ঠস্বর। তার পথচলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যেখানে ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতায় পরিণত হওয়ার পাশাপাশি বিরল ইতিহাসও রচিত হয়েছে।