০৬ মার্চ ২০১৯, ১৪:১৮

ডাকসু: নির্যাতন ও হুমকির বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে চান আলীম

মোঃ আবদুল আলীম ইশতেহার ঘোষণা  © টিডিসি ফটো

প্রায় ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন মোঃ আবদুল আলীম। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণে নিজেকে নিবেদিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তিনি।

এতে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও হুমকির বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থাসহ নানা কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন আলিম হায়দার। বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

মো. আবদুল আলীমের নির্বাচনী ইশতেহার:

# বিশ্ববিদ্যালেয়র প্রতিটি শিক্ষার্থীর মর্যাদাভিত্তিক সম্পর্ক নিশ্চিত করতে প্রচলিত ‘টপ টু বটম’ লিডারশিপ স্টাইল বাতিল করে ‘রাউন্ড টেবিল লিডারশিপ’ চালু করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে নেতা-কর্মী সম্পর্কের টার্ম ও ধরন বদলে যাবে। কর্মী নন তারা হবেন সহকর্মী, নেতা নন তারা হবেন মুখপাত্র: এটাই হবে সম্প্রীতির সম্পর্ক। গতানুগতিক স্টাইলে নেতা-কর্মীর মধ্যকার আদেশ জারি ও হুকুম পালনের বাধ্যবাধতা থাকবে না, সকলের মর্যাদা নিশ্চিত হবে। সম্পর্ক হবে সহযোগিতামূলক। এই ক্যাম্পাস শোষণ বা অবদমনের নয়, বরং ব্যক্তিত্ব গঠনের সূতিকাগার হিসেবে আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। পাঁচ বছর স্বস্তঃস্ফূর্ত পরিবেশে নিজেদের ব্যক্তিত্ব বিকশিত করতে পারলে প্রতিটি শিক্ষার্থী শুধু একটি সার্টিফিকেট নয়, বরং সমাজকে আলোকিত করতে একেকটি আলোকবর্তিকা হয়ে বের হবে।

# যেকেনো বড় ইস্যুতে বিষয় ভিত্তিক ওপেন-এন্ডেড ডিসকাশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ ও জরিপের ব্যবস্থা থাকবে। সংখ্যা গরিষ্ঠের মত নিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য সিনেট-সিন্ডিকেটের বৈঠকে বসা হবে। প্রতি মাসে গণ আলাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিনিধির জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।

# ক্যাম্পাসের সম্পর্কের মানদণ্ড হবে সমতাভিত্তিক, অ্যাকাডেমিক সিনিয়রিটি-জুনিয়রিটির ভিত্তিতে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দলীয় পদ-পরিচয় তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এই কমান্ডের বাইরে থাকবেন। এটি নিশ্চিত করা হবে।

# রাত ১২টার পর আবাসিক হলের করিডোরে কোনো স্লোগান বা কর্মসূচি চলবে না।

# গায়ে হাত তোলা বা মানসিক নির্যাতন বা হুমকি-ধামকির জন্য থাকবে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা।

# মেয়েরা আজো অবরোধবাসিনী। তাদের হলগুলো সন্ধ্যার পর কারাগারে পরিণত হয়। ছেলেদের হলের মতো মেয়েদের হল তাদের প্রয়োজনীয় চলাফেরার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।

# ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পাশাপাশি ডাকসুর বিশেষ পেট্রোল টিম থাকবে। থাকবে অভিযোগ বক্স, বা অনলাইন কমপ্লেইন ইনবক্স। ক্যাম্পাস থেকে ভয়ের সংস্কৃতি তাড়িয়ে দেওয়া হবে।

# গেস্টরুম নামক অপসংস্কৃতি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডর পরিধি বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থীদের পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

# হলগুলোর ক্যান্টিন-সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে। ৫০ টাকায় দুই বেলা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকার যে কোনো মেসে ১০-১২ জন সদস্য একইরকম খরচে অনেক ভালো খাবার খাচ্ছেন। ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে শত শত শিক্ষার্থীর জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়, অথচ তা খুবই নিম্নমানের। একই খরচে শিক্ষার্থীদের মন খুশি করার মতো এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা থাকছে।

# ডাকসুর ফান্ডে টাকার অভাব নেই। প্রতিবছর প্রথম বর্ষে সুযোগ পাওয়া বা ভর্তি হওয়া অন্তত এক শতাংশ শিক্ষার্থী বা অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থীর অ্যাকাডেমিক ব্যয়ভার বহন করবে ডাকসু। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মেধাবীদের সন্মানিত করতে ডাকসু-বৃত্তি চালু করা হবে। এই বিশ্ববিদ্যালের সুযোগ পাওয়ার পর কোনো শিক্ষার্থীকে যেনো লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য যেখানে সেখানে হাত পাততে না হয় তা নিশ্চিত করা হবে।

# এমফিল-পিএইচডি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের গবেষণা বৃত্তি বাড়ানো হবে।

# কেন্দ্রীয় ও হলের লাইব্রেরিগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে, থাকবে সিসি-ক্যামেরা ও নিরাপত্তা।

# শিক্ষার্থীদের মানসিক পরিস্থিতি উন্নত রাখতে করা হবে আধুনিক কাউন্সেলিং সেন্টার।

# ডাকসুর উদ্যোগে প্রতিটি শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে (একজনের জন্য একটি করে) বছরে একবার বৃক্ষ রোপণ করা হবে। প্রতিবছর কমপক্ষে ৪০ হাজার বৃক্ষ রোপণের এই উদ্যোগ ক্যাম্পাসকে সবুজ করার পরে পুরো ঢাকা এমনকি পুরো দেশকে সবুজ করে তুলবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপদ শ্বাস—প্রশ্বাস নিশ্চিতে ডাকসুর ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে আধুনিক বাংলাদেশের ফুসফুস।

প্রসঙ্গত, মোঃ আবদুল আলীম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। কবি ও লেখক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। এই মঞ্চের প্রচারণা সেলের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদেরও সদস্য।