‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জবি শাখার কমিটিতেই বৈষম্য’
- জবি কন্ট্রিবিউটর
- প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১০ PM , আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৯ PM

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন দুইজন পদপ্রাপ্ত নেতা।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এই কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে কমিটিতে নাম থাকা কয়েকজন নেতা যোগ্য পদ না পাওয়ার কারণে পদত্যাগ করে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে কমিটির বিরোধিতা করছেন। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীদের মতে, যোগ্যদের বাদ দিয়ে একদল মানুষ সুবিধা গ্রহণের উদ্দেশ্যে এ কমিটি গঠন করেছে।
তাছাড়া পদবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নামে বৈষম্যবিরোধী হলেও জগন্নাথের কমিটিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন অনেকেই। অনেকে আন্দোলন করেও পদ পাননি বলে মন্তব্য করেছেন।
পদত্যাগ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন জবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন মিয়া। তিনি বলেন, “জবিতে দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি মূলত পদত্যাগ করা সমন্বয়ক নূর নবীর পছন্দের লোকদের নিয়ে করা হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয়নি। এখানে দেখা হয়েছে নূর নবীর অনুগত কিনা। এই ব্যক্তিগত কমিটি মানি না এবং প্রত্যাখ্যান করছি।”
কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে ফেরদৌস শেখ বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি আবেগের প্ল্যাটফর্ম। জবিতে এই কমিটি গঠন বিষয়ে কিছু না জানিয়ে আমার নাম দেওয়া হয়েছে। যেখানে আমার নামটাও সঠিকভাবে লিখতে পারেনি। কমিটির জন্য আমরা ৯০ জনের তালিকা করেছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে কাউকে না জানিয়ে হুট করে এ কমিটি ঘোষণা দেওয়া হলো।”
তিনি বলেন, “যেহেতু এ কমিটিতে আমার অনেক সহযোদ্ধা বড় ভাই, বন্ধু ও ছোট ভাইকে সুকৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাই এই কমিটিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। পাশাপাশি নিজে অব্যাহতি নিচ্ছি এই কমিটি থেকে।”
এছাড়া অনেকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করছেন, যাদের অনেকে এখন বিভিন্ন ছাত্র রাজনৈতিক দলের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যার ফলে, সমালোচনার বিষয়টিকে জবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করছেন।
জবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, “আমি ফেসবুকে দেখেছি তিনজন কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় অভিযোগ তুলেছেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। কিন্তু তাদের এই পদটা পছন্দ হয়নি। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। কোনো ব্যক্তি যদি তার ইচ্ছামতো পদ না পেলে সংগঠনকে বিতর্কিত করে, তবে বুঝতে হবে তারা সংগঠন নয়, বরং পদের লোভে এসেছে। এই ধরনের লোক নিয়ে সংগঠন করাটা কষ্টকর।”
তিনি আরও বলেন, "আন্দোলনে অনেকে অংশ নিয়েছে। আমরা সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। সেজন্য আমরা কেন্দ্রে অনেকের নাম পাঠিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের মতো পরিমার্জন করে কমিটি ঘোষণা করেছে। এখানে আমার কোনো হাত নেই এবং কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি।”
অভিযোগের বিষয়ে কমিটির সদস্য সচিব সিফাত হাসান সাকিব বলেন, “একদল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা কিছুদিন আগে নিজেদের মতো করে কমিটি আনার চেষ্টা করেছে আমাদের না জানিয়ে। আমরা তবুও তাদেরকে সম্মান করে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই। আমি জানি না, এখন তারা কেন এমন সমালোচনা সৃষ্টি করছেন। অথচ তারা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। কমিটি ঘোষণার আগের দিন আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ছোট কমিটি হওয়ায় অনেকে স্থান পাননি। তাদের অবদান আমরা অস্বীকার করি না। আমরা কমিটি বর্ধিত করার জন্য কেন্দ্রে অনুরোধ জানিয়েছি। এই কমিটি ৬ মাসের জন্য করা হয়েছে।”
অভিযোগের ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, জবি শিক্ষার্থী মো. নূর নবী বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যারা আন্দোলন করেছে, তারা একজনের মাইম্যান হয়ে তার কথায় উঠবে-বসবে—এগুলো বলা অযৌক্তিক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যারা কাজ করেছেন, তারা দলমত নির্বিশেষে সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদেরকে নিয়েই এই কমিটি গঠন হয়েছে। কয়েকজন তাদের চাহিদা অনুযায়ী পদ পায়নি, এজন্য এমন ধরনের কথা বলছে।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত বৈষম্যবিরোধী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি প্রকাশ করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানাকে এবং সদস্য সচিব করা হয় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত হাসানকে।