২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:২৪

জুলাই আন্দোলনে সময় টিভির ভূমিকা ও ‘সাংবাদিক বরখাস্ত’ নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস হাসনাতের

হাসনাত আবদুল্লাহ  © সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির ভূমিকা নিয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে চাকরিচ্যুত করার জন্য তালিকা সরবরাহ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন—এমন একটি তথ্য সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।  

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) এ নিয়ে সংগঠনের অবস্থান স্পষ্ট করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

হাসনাত ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘মঙ্গলবার, এএফপি সংবাদ সংস্থা সময় টিভিতে বেশ কিছু সাংবাদিককে বরখাস্ত করার কথা জানিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, এই ঘটনাকে এমনভাবে চিত্রিত করেছে যে ছাত্ররা সাংবাদিকদের বরখাস্ত করতে মালিকদের বাধ্য করেছে। যা সত্য নয়।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শতাধিক শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২ হাজার নিহত হয়েছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করা হয়।

অনেক টিভি স্টেশন, সংবাদপত্র এবং খবরের ওয়েবসাইট বিদ্রোহকালে সাংবাদিকতায় ন্যূনতম নৈতিকতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা ছাত্র এবং প্রতিবাদকারীদের ‘জঙ্গবাদী’ এবং ‘দুর্মাক্ত’ এবং ‘ইসলামি চরমপন্থি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের অমানবিকতার প্রতিবাদ করার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে সম্প্রতি সিটি গ্রুপের অফিসে গিয়েছিলাম। কারণ তারা হাসিনার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ব্যাপক সমর্থন ও বৈধতা দিয়েছে।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘সময় টিভি এই প্রচেষ্টায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। প্রকৃতপক্ষে ২৪ ঘণ্টার এই টিভি স্টেশন গত ১৬ বছরে মানবতার বিরুদ্ধে হাসিনার প্রতিটি অপরাধকে সমর্থন ও বৈধতা দিয়েছে। যার মধ্যে আছে বিচারব্যবস্থা হত্যা, জোরপূর্বক গুম এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্র্যাকডাউন। এ ছাড়া ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে একটি নীরব মিডিয়া প্রচারণা চালিয়েছে সময় টিভি, যার মধ্যে আছেন শহিদুল আলম, ডেভিড বার্গম্যান, লিসা গাজী এবং এএফপি ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক কদর উদ্দিন শিশিরের মতো মানুষ।’

হাসনাত বলেন, এএফপি ঘটনাটি এমনভাবে বর্ণনা করেছে যে, ‘আমরা সিটি গ্রুপে প্রবেশ করেছি’, আমরা বৈধ প্রতিবাদ করার জন্য সেখানে যাইনি। এএফপি ১৬ বছরে বিক্ষোভকারীদের অমানবিকতা এবং মানবতার বিরুদ্ধে হাসিনার নৃশংস অপরাধকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় টিভি যে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে তা উল্লেখ করেনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা পুনরায় বলতে চাই, আমরা সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে জুলাইয়ে সময় টিভির জনবিরোধী ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছি। বরখাস্তের জন্য আমরা মালিকদের কোনো সাংবাদিকের তালিকা দিইনি। আমরা টিভি স্টেশনের শেয়ারও দাবি করিনি। আমাদের মাঝে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। আমি এই অভিযোগগুলোকে আমার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করি। টিভি স্টেশনের মালিক বা সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোনো বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে এসব অভিযোগ আসেনি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরো বলেন, ‘বারবার বলেছি আমরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আন্দোলনকালে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত সাংবাদিক এবং হাসিনার রক্তপিপাসু নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে যারা সত্য রিপোর্ট করতেন সেই সাংবাদিক ও সম্পাদকদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আমরা তাদের স্যালুট জানাই। আমরা সব বিদেশি সংবাদমাধ্যমের বিপ্লবের সময় তাদের ভূমিকার জন্য অভিবাদন জানাই।’

এর আগে, জুলাই আন্দোলনে প্রোপাগান্ডার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির বিনিয়োগকারীদের চাপ দিয়ে ৫ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করানো হয়েছে বলে বিনিয়োগ বিষয়ক ম্যাগাজিন ব্যারনস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।