নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ সারজিসের
‘ছাত্র-গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সিটি ও পৌর কাউন্সিলরদের জনস্বার্থে পুনর্বহালের দাবিতে কাউন্সিলর সমাবেশ’এ অংশগ্রহণ ও নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।
সারজিস ফেসবুকে লেখেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কাউন্সিলর আছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল আমাদের সঙ্গে কিছুদিন পূর্বে দেখা করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেছিল আমরা সব কাউন্সিলরদের প্রতিনিধিত্ব করছি না বরং আমরা সাড়ে পাঁচ হাজারের মধ্যে দেড় হাজার কাউন্সিলরদের প্রতিনিধিত্ব করছি। তাদের ভাষ্য ছিল- ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর ব্যতীত বিএনপি-জামায়াত এবং স্বতন্ত্র জায়গা থেকে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন তারা তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। যদিও আওয়ামী আমলের নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মতামতের সারমর্ম অনেকটা এমন- প্রথমত, নির্বাচনে তারা দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করেননি।পাশাপাশি বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মাধ্যমে তারা বিভিন্নভাবে অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা ও জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। তারপরও ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতায় তারা নির্বাচন করে জয় লাভ করেছেন। ২৪ এর ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণও ছিল যা তাদের মধ্যে কয়েকজন ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে দেখিয়েছেন। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় মার্কায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনেকেই নির্বাচিত হয়েও এখনো সপদে বহাল আছে। তাহলে ব্যক্তিগত যোগ্যতায় জয় লাভের পরেও তারা সপদে বহাল থাকার দাবি করতে পারেন কি না।
দ্বিতীয়ত, যে কাউন্সিলররা আওয়ামী লীগের দোসর ছিল তারা অলরেডি পালিয়ে গিয়েছে। এতদিন আওয়ামী লীগের বিপক্ষে লড়াই করে টিকে থাকার পর আজ যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে তখন আওয়ামী লীগের দোসরদের মতো তাদেরও বরখাস্ত করা হলে এটা তাদের জন্য অপমানজনক। চট্টগ্রামসহ দুই তিনটি জায়গায় কোর্টের রায়ের মাধ্যমে বিএনপির একাধিক নেতা মেয়র ও চেয়ারম্যান পদ ফিরে পাওয়ায় এটি তারা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে। তাদের ভাষ্যমতে- তাদের সঙ্গে যদি আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা কিংবা ফ্যাসিস্ট দোসরদের সঙ্গে অভ্যুত্থানের বিপক্ষে অংশগ্রহণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের কাউন্সিলর পদ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু যদি এমন কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়া যায় তাহলে তারা যেন কাউন্সিলর পদ ফিরে পায়।
সারজিস আরও লেখেন, সেই জায়গা থেকে তারা একটি মতবিনিময় সভা করতে চায় এবং তাদের কথাগুলো শোনার জন্য বারংবার অনুরোধ জানায়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জায়গা থেকে মনে হয়েছে যেহেতু তারা দেশের স্থানীয় পর্যায়ের একটি অংশকে রিপ্রেজেন্ট করে তাই অন্তত তাদের কথাগুলো শোনার মানসিকতা আমাদের থাকা উচিত।
আমাদের জায়গা থেকে ওই সময়ে মনে হয়েছে- দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ এখনো বিদ্যমান রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধির অভাবে কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে এবং জনগণের পালস বুঝে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় রেসপন্স করতে পারছে না, আমলাদের যাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে তারাও বিগত ১৬ বছরে কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগকে সার্ভ করে এসেছে- কেউই ধোয়া তুলসি পাতা না, তদন্ত সাপেক্ষে ফ্যাসিস্টবিরোধী এবং স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য কাউন্সিলরদের যদি তার নির্দিষ্ট অফিসে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে স্থানীয় প্রশাসনে এই স্থবিরতা কিছুটা কমে আসতে পারে।
তিনি আরও লেখেন, সেই জায়গা থেকে আমরা তাদের কথা শোনার জন্য মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করি এবং ওই সময়ের অনুধাবন থেকে আমরা তাদের বিষয়টিকে স্থানীয় সরকার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে তুলে ধরার মতামত ব্যক্ত করি। কোনো একটি জিনিস সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে তুলে ধরার মানে এই নয় যে সেটি বাস্তবায়ন হবে। তাছাড়া আমরা এটাও মনে করি না যে, আমরা একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যা অনুধাবন করবো তার সবই ঠিক। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। কেউ যখন সেটি ধরিয়ে দেয় তখন সেটিকে যৌক্তিক মনে হলে আমরা সেটি সংশোধন করার মানসিকতা রাখি।