৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাতীয় নাগরিক কমিটি, তবে...
গত সেপ্টেম্বর মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্বে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নামের এক প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করা হয়েছে। ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে এতে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল হলে অংশ নিলে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে প্ল্যাটফর্মটি যদি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয় তাহলে এটা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুাত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি প্রশ্ন : নয়াস্বরূপ অনুসন্ধানের অভিপ্রায়’ শীর্ষক আলোচন সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন জানান, আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি কত আসনে প্রার্থী দেবে? জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো আসনেই প্রার্থী দেবে না।
“তবে ছাত্র-তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক একটা দলের উন্মেষ ঘটেছে। রাজনৈতিক একটা দলের আকাঙ্ক্ষার তৈরি হয়েছে। যদি একটা রাজনৈতিক দল (জাতীয় নাগরিক কমিটি) হয় আর সেখানে যদি আমার কাজ করার সুযোগ হয়। তাহলে আমি চেষ্টা করব, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার।”
দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলতে আমরা বলতেছি, ছাত্ররাজনীতির নামে অমানবিক নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধের কথা। আমি ব্যক্তিগতভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে নই, বুয়েটে যখন আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, তখন বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। তখনও যখন আমাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিল, তখনও আমি বলেছিলাম আমি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে নই।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে, আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, যখন দলীয় রাজনীতি, লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি যে ফরমেটেই আপনি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলেন না কেন। বুয়েটের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে, আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্ররা একত্রিত হয়েছি। আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অনেকটা পরে আমাদের সাথে পেয়েছি। তাদের আমরা কেন পরে পেয়েছি জানেন, কারণ বুয়েটের শিক্ষার্থীরা অনেকটা ভয়ে থাকতো, তাদের ওখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, যদি তারা কোন আন্দোলনে পার্টিসিপেট করে, তখন তাদের এই ইস্যুটা নিয়ে তাদের ওইখানে বহিষ্কার করা হবে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বলতে এইরকম পর্যায়ে পর্যন্ত ভাবা হয়েছে সেখানে।
তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এই বক্তব্যের সাথে আমি একমত নই, তাহলে আমি কিসের সাথে একমত। আমি একমত হচ্ছি, ছাত্ররাজনীতির নামে এতদিন যা করা হয়েছে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, গেস্টরুম, গণরুম, অত্যাচার, নির্যাতন।
লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিয়ে হলগুলোতে ছাত্রলীগের অমানবিক নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে তার সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা তুলে ধরে আখতার হোসেন বলেন, আমাকে গেস্টরুমে নিয়ে, আমার ফোন নিয়ে আমি কাদের কাদের ওখানে লাইক দিচ্ছি সেটা পর্যন্ত চেক করা হয়েছে। আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা বলি, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন ডিজি ছিলেন, দাড়ি ছিল অনেক বড় বড়। ওনি একজন বিচারক ছিলেন। আমি যেহেতু আইন বিভাগে পড়তাম, আর ওনি বিচারক থাকার পরেও পরবর্তীতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হয়েছিলেন। কাজেই ওনি আমার একজন অনুপ্রেরণা ছিলেন। আমি ওনার ছবি আমার ফোনে সেভ করে রেখেছিলাম। এই যে আমি সাদা বড় বড় দাড়িওয়ালা একজনের ছবি ফোনে সেভ করে রেখেছি। এর জন্য ছাত্রলীগ আমাকে ধরে গেস্টরুমে ব্যাপক নির্যাতন করেছিলো। এটাই ছিল ছাত্ররাজনীতির স্বরূপ। যেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেখে এসেছে। এই কারণে আজ আমরা যদি এখনি ভোট দেই, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে কী হবে না। দেখবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্বই শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেবে তারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চায়। এটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্ব। এই জায়গায় শিক্ষার্থীরা ট্রমাটাইজড হয়েছে এসেছে।’
তিনি বলেন, তাহলে সমাধানটা কোন জায়গায় বা আসলে দায়টা কাদের। এখানে যারা আছেন বক্তারা প্রত্যেকে সমাধানের প্রোপোজড করেছেন। আমাদের ছাত্ররাজনীতির যে খারাপ দিকগুলো আছে, যার কারণে শিক্ষার্থীরা সবসময় নির্যাতিত হয়েছে। এই জায়গায় দায় যদি কারো থেকে থাকে, তাহলে সবচেয়ে বড় দায় হলো প্রশাসনের। আমি যতবার ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি, প্রশাসন একবারও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা ডেকে সতর্ক পর্যন্ত করেনি। এখানে ছাত্র ইউনিয়ন দাবি করেছে তারা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি করে না, ছাত্রশিবিরও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি করে না বলে জানিয়েছে। আজকে যদি নাসির ভাই (জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক) উপস্থিত থাকতেন, তিনিও যদি পরিষ্কার করতেন, ছাত্রদল দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি করে কি না, তাহলে আমরা একটা জায়গায় আসতে পারতাম। তবে, অন্তত আমি একটা বিষয়ে আমি একমত হতে পেরেছি। আমরা আসলে কেউই দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি কখনো করিনি, আর চাইও না।
আখতার হোসেন আরও বলেন, এখন আমাদের এটা ঠিক করার বিষয়। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বলতে কি বুঝায়, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠন কখন করছে বলে আমরা ধরে নেব। আজকে যে নাসির ভাই তারেক রহমানের বক্তব্য শুনতে গেলেন এ প্রোগ্রামে না এসে, এই ব্যাপারটিকে আমরা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক বলতে পারি কি না এটা একটা তর্কের বিষয় হতে পারে বলেও জানান তিনি।