বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক সংগঠন না: হাসনাত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ PM , আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম।’ আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বৈঠক হয় ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সাথে।
স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানান অভিযোগে ছাত্রদল এবং বামসহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন সভা বয়কট করে। তাদের প্রশ্ন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধিদের ৩ ডিসেম্বরের সভায় শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা কেন দেখা করেছেন? ঐক্যের প্রশ্নে অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের না নেওয়ায় ক্ষোভ জানান অনেকে।
বুধবারের সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন কিনা, সে প্রশ্নও উপস্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা তুলেছেন বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সভা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান একটি বিবৃতি দেন।
তিনি দাবি করেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সাথে গতকালের সভায় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন কিংবা অভ্যুত্থানকারী সংগঠন হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বরং গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সাথে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বজায় রাখতে সরকারের ভূমিকার ব্যাপারে পরামর্শ নেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। জাতীয় ঐক্যমত গঠনের যে ডাক প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন, গতকালের মতবিনিময় সভায় তার কোনো প্রয়াস ছিল না।’
এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তাহলে তো পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হল। গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা কি কেবল ও ক’জনকেই চেনেন? সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এখানে সবাই বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে?’
তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে সরকার যখন যে ক্রাইটেরিয়াতেই ডাকে না কেন, তাতে বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়ক এবং নাগরিক কমিটির বাইরের কাউকে দেখা যায় না। আবার নাগরিক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব মঙ্গলবার ছাত্র প্রতিনিধি এবং বুধবার রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কার কার পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর কীসের ভিত্তিতে ঠিক করে?’
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার প্রকল্প, শহীদদেরকে নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগসহ নানাবিধ কার্যক্রমে ছাত্রদের যুক্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু আমরা সবক্ষেত্রে দেখেছি, কেবল একটি সুনির্দিষ্ট পক্ষকে সব কার্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। অন্য কোনো সংগঠনের সাথে কোনোপ্রকার আলোচনাও করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনার নামে কেবল কয়েকজন সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এতে জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখন একটি পক্ষের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ছাত্রদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভায় উপস্থিত অন্য এক ছাত্র সংগঠনের শীর্ষনেতা বলেন, গতরাতের সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হন। তারা এখনো জানে না, তাদের সংগঠনটি কাদের নিয়ে। তারা কি কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন? এই প্রশ্নের জবাবও তারা দিতে পারেননি।
আরো পড়ুন: বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ নয়, হবে ‘বিজয় মেলা’
তারা যদি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন না হয়ে থাকে, তাহলে তাদের ডাকে আমরা আসবো কেন? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যদি তারা রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন হয়ে থাকে, তবে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা কেন ছিলেন? তারা তো ছাত্র সংগঠন না।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে হাসনাত আব্দুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এখানে কোনো ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে ডাকেনি৷ গণঅভ্যুত্থানের যে প্লাটফর্ম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন- তাদের ডেকেছিলেন। সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে ক্রমানুযায়ী ডাকবেন বলে আমরা জানি। ছাত্র সংগঠন, সুশীল সমাজ সবাইকেই ডাকবেন। ছাত্র সংগঠনগুলোর মূল সংগঠন কিন্তু প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে বসছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন না৷ আমরা গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম।’