০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:২০

ছাত্রসংসদ চান না বুয়েট শিক্ষার্থীরা, ‘ভয়াল’ ছাত্ররাজনীতি ফেরার শঙ্কা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)  © সংগৃহীত

বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। সাধারণত পড়াশোনায় যারা অত্যন্ত মেধাবী, ভর্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তারাই এখানে পড়াশোনার সুযোগ পান। শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশই পড়াশোনা ও গবেষণার পরিবেশ যেন ব্যাহত না হয়, তার জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চান না। এরই ধারাবাহিকতায় তারা চান না ছাত্রসংসদ নির্বাচন।

জানা গেছে, ১৯৬২ সালে ছাত্র সংসদ (ইউকসু) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২১ বার কমিটি হয়েছে। সর্বশেষ ইউকসু নির্বাচন হয় ২০০১ সালে। তবে বর্তমানে বুয়েট শিক্ষার্থীরা ইউকসুর পুনঃপ্রতিষ্ঠা চান না। তাদের মতে, ইউকসু পুনরায় চালু হলে ‘ভয়াল’ ছাত্ররাজনীতির প্রত্যাবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই ছাত্রসংসদ নির্বাচন চায় না বলে জানিয়েছেন তারা।

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতির প্রতি বিরূপ ধারণা বিশেষভাবে জোরালো হয় ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর। ওই বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী। 

ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারণেই আবরারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় রচনা করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সে বছরই বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেছে অন্তত এক ডজন বুয়েট শিক্ষার্থী। তবে কেউই পরিচয় প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি এখন দলীয় হস্তক্ষেপ, লেজুড়বৃত্তি এবং পেশিশক্তির সমার্থক হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির বদলে এটি দখলদারিত্ব ও দমন-নিপীড়নের রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। সনি, দীপ, আবরারের মতো শিক্ষার্থীদের জীবন দিতে হয়েছে এর মাশুল হিসেবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বলছি না ছাত্ররাজনীতির শুধু খারাপ দিক আছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে প্রশাসনকে সচেতন করা কিংবা দেশের রাজনৈতিক কাঠামো নির্ধারণে মতামত দানের মতো ইতিবাচক দিকও রয়েছে। তবে বুয়েটের অতীত ঘটনাবলীর পর্যালোচনায় আমরা মনে করি, বর্তমানে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির দরকার নেই। ইউকসু চালু হলে ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসবে, যা আমরা চাই না।

তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতির ভয়াবহ পরিণাম দেখেছে। আমরা আন্দোলন করে ছাত্ররাজনীতিকে হটিয়েছি। এটি ফিরে এলে নেপোটিজম বাড়বে। ইউকসু নির্বাচন ছাত্ররাজনীতির ফিরিয়ে আনার পথ। এক সময় আবার আবরারের মতো কাউকে জীবন দিতে হতে পারে। আমরা কোনোভাবেই সেই পরিস্থিতি চাই না।

নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ইউকসু চালু হওয়া মানে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনা। বর্তমানে দেশে ছাত্ররাজনীতির কোনো সুষ্ঠু ধারা নেই। বুয়েট শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনও ছাত্ররাজনীতির প্রতি ভয় বিরাজ করছে। আমার মতে, দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার পরিবেশ তৈরি হলে তবেই ইউকসু চালুর বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই।

ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে বুয়েট প্রশাসনেরও কোনো পরিকল্পনা নেই। বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক বলেন, বুয়েটে এখনো ছাত্রসংসদ চালুর কোনো পরিকল্পনা নেই।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ মাসে নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ বুয়েটে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামে।