২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:১৭

ঢাবিতে আসিফ নজরুল-মির্জা ফখরুল-শফিকুর রহমানকে জাতীয় বেঈমান ঘোষণা

  © সংগৃহীত

ভারতের পরিকল্পনায় ফ্যাসিবাদী দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। সংগঠনটির দাবি, এ ষড়যন্ত্রে করতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান জড়িত। এজন্য এই তিনজনকে জাতীয় বেঈমান ঘোষণা করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা হয়।

দুপুরে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। এতে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমানের সঞ্চালনায় চিত্রশিল্পী সাইয়েদ কুতুব, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।

সমাবেশে সাইয়েদ কুতুব বলেন, আমরা যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি এ মাটিতে এখন শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ মুগ্ধের তাজা রক্ত লেগে আছে৷ এ মাটিতে ফ্যাসিবাদী ও ফ্যাসিবাদীদের দোসরদের কোনো জায়গা হবে না। তাদেরকে পুনর্বাসনের সকল ষড়যন্ত্র রুখতে ছাত্র-জনতার পাশে সর্বস্তরের জনগণ আছে এবং থাকবে।"

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক হাসান আরিফ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে ও রাজনৈতিক অধিকার দিতে ক্রমাগতভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। 

আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক হয়ে আসিফ নজরুল কীভাবে ফ্যাসিবাদের পক্ষে বক্তৃতা করছেন এ প্রশ্ন রেখে তাকে অবিলম্বে অপসারণে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

হাসান আরিফ আরও বলেন, গত সতেরো বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জীবন দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের লোকেরা। অথচ নিজ কর্মীদের আত্মত্যাগ, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ এবং গণদাবী উপেক্ষা করে মির্জা ফখরুল এবং ডাক্তার শফিক আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলছেন।

আওয়ামী লীগের দালালি করায় মির্জা ফখরুল ও ডা. শফিককে দলীয় পদ থেকে সরাতে বিএনপি ও জামায়াতের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমন্বয়ক গালিব ইহসান বলেন, অনতিবিলম্বে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জুলাই বিপ্লবের শহীদের রক্তের সাথে গাদ্দারীর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। যদি ক্ষমা না চায় তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তার নাম মুছে ফেলতে হবে।

তিনি বলেন, জামায়াতের আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান, ফ্যসিবাদীরা যদি আপনার পরিবারের লোক হয়ে থাকে তাহলে বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদ কায়েমের নীলনকশার সঙ্গে আপনিও জড়িত। 

অনতিবিলম্বে ক্ষমা চেয়ে জামায়াতের আমীরের পদ থেকে ডা. শফিকুরকে পদত্যাগেরও আহ্বান জানান গালিব ইহসান।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, এদেশে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন হবে কি হবে না, আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না সেটা ৫ আগস্ট ছাত্র জনতাই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে। আমাদের ছাত্রজনতার শেষ রক্তবিন্দু থাকতে আওয়ামী লীগ এদেশে আর মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। 

তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের উদারতার অংশ হিসাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। তিনি ভারত থেকে শেখ হাসিনাকেও দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু হাসিনার ফেরার পরপরই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার শিকার হব। এরপরেও বিএনপি কীভাবে জুলাই গণহত্যার পরেও আওয়ামী লীগকে ভোটের রাজনীতিতে আনতে চায়। তাদের এ দুঃসাহস দেখে আমাদের লজ্জা হয়, রক্ত গরম হয়ে যায়। 

সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান বলেন, আমরা পরিষ্কার করে ঘোষণা করতে চাই ভারতের যে সকল দালাল এই দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চিন্তা ভাবনা করবে আমরা তাদেরকে প্রতিহত করবো। আমরা তাদেরকে হাসিনার মত পালিয়ে যেতে বাধ্য করবো। এদেশে তাদের কবরও হবেনা ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন,আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যেই দাবিগুলো জানিয়েছিলাম গত ১৬ বছরে হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার যেসব অত্যাচার করেছে, গুম খুন করেছে সেই গুমখুনের পরিপূর্ণ তদন্ত করে সেগুলোর বিচার করতে হবে। গত জুলাইয়ে যে গণহত্যা হয়েছে তার বিচার না করে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবেনা। 

ফজলুর রহমান আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার গত তিনটা নির্বাচন আমাদেরকে ভোট দিতে দেয়নি তারপরেও কতিপয় দালাল তাদেরকে ভোটের ময়দানে আনার জন্য উঠে পরে লেগেছে। আমরা তাদেরকে পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই যে ফ্যাসিস্ট দল গণহত্যাকারী দল আমাদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, আমাদের রক্ত ঝরিয়েছে, আমাদের ভাইদের শহীদ করেছে, আমাদের দেশ বিক্রি করে দিয়েছিল তাদেরকে আমরা এই দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দিব না। তারা এদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার রাখে না। এই ফ্যসিবাদকে বিলুপ্ত করে আমাদের দেশকে সুষ্ঠু সুন্দর পরিপূর্ণ স্বাধীন দেশে রুপান্তর করতে হবে এবং আমাদের প্রতিটি সেক্টর থেকে ফ্যাসিবাদকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। ভারতের অন্যায় হস্তক্ষেপ আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। দালালদের প্ররোচনায় আমরা কোনো বিদেশি প্রভুর হাতে ছেড়ে দিতে কখনোই প্রস্তুত না। আমরা দালালদের জানিয়ে দিতে চাই যদি প্রয়োজন হয় আপনারা এই দেশ ছেড়ে চলে যান, এই দেশে আপনাদের কোন স্থান নেই। 

বিপ্লবী ছাত্র পরিষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান বলেন, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ ভাই ও চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিম আকরাম ভাই শহীদ হন। ওয়াসিম আকরাম ভাই ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সেই সক্রিয় কর্মীর রক্তের উপর দাঁড়িয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে হবে। কেন? আপনার কর্মীর রক্তের দাম কি নেই? আপনার নিজের কাছে নিজের দলের চেয়ে কি আওয়ামী লীগ দামি? এর মানে কি? দেশের চেয়ে আপনার ভারত বড় হয়ে গেল?

তিনি আরও বলেন, গত ১৬ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীরাও লীগের হাতে শিবির ট্যাগে মার খেয়েছে। আমাদের শহীদ আবরার ফাহাদকেও শিবির ট্যাগ দিয়ে ছাত্রলীগ হত্যা করেছে। ডাক্তার শফিকুর রহমান, আপনার কি বিন্দুমাত্রও লজ্জা নেই? আপনাদের কর্মীর কি বিন্দুমাত্রও দাম নেই? আপনাদেরকে কি আবার আওয়ামী লীগকে ভোটে আনতেই হবে? আমি বলবো, লজ্জা করুন। দেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করুন। দেশকে বিকিয়ে দিবেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্র নেতা আরও বলেন, এতবড় শক্তি এখনো আসেনি যে বাংলাদেশকে কিনে ফেলতে পারবে। হাসিনার ক্ষমতা হয়নি ষোল বছরে বাংলাদেশকে বিক্রি করার। আর কারোর পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব হবেনা। রাজপথে আমরা আছি, রাজপথে থাকবো। আমরা অল্প লোক, তবে আমরা শক্তিশালী লোক, আমরা কোন মেরুদণ্ডহীন লোক নই। আমরা ২০ জন হাতি দাঁড়িয়েছি এক লক্ষ তেলাপোকার বিরুদ্ধে। একলক্ষ তেলাপোকা পিষে ধুয়ে মুছে  চলে যাবে ইনশাআল্লাহ। বিএনপি জামায়াতের সাধারণ কর্মীদের বলছি আপনারাও নিজেদের নেতাদের চিনতে শিখুন।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষের সহকারী সদস্য সচিব জিহাদী ইহসান বলেন, আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়েছি আমাদের শহীদ ভাইদের রক্তের হিস্যা বুঝে নিতে। শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে কোন খুনির দোসরদের পুনর্বাসন হতে পারে না।

সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, ভারতের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান, হাসিনা গেছে যে পথে ফখরুল যাবে সে পথে, হাসিনা গেছে যে পথে ডা. শফিক যাবে সে পথে, হাসিনা গেছে যে পথে আসিফ নজরুল যাবে সে পথে প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।