শাবিপ্রবিতে অর্ধশতাধিক ‘জিয়া ট্রি’ রোপণ ছাত্রদলের
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ৫৩টি ‘জিয়া ট্রি (নিমগাছ)’ রোপণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৮ নভেম্বর) জুমার নামাযের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পূর্ব পাশে সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা রাহাত জামানের নেতৃত্বে এসব গাছ রোপণ করা হয়েছে। বৃক্ষরোপণ শেষে এই স্থানটিকে ‘জিয়া ট্রি উদ্যান’ নামকরণ করা হয়।
এসময় ছাত্রনেতা রাহাত জামান বলেন, এমন উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম, ঐক্য এবং সামাজিক দায়িত্ববোধকে আরও গভীরভাবে প্রোথিত করবে।স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শহীদরা যেভাবে জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই ইতিহাস আমাদের জীবনে অমূল্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই ‘জিয়া ট্রি’গুলো শুধু শহীদদের স্মরণ নয়, বরং তাদের সাহস ও দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবেও দাঁড়িয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ। ‘জিয়া ট্রি’ বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘জিয়া ট্রি’ তার ঔষধি ও প্রাকৃতিক কীটনাশক গুণাবলির জন্য প্রসিদ্ধ, যা আমাদের পরিবেশকে আরো স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সহায়ক হবে।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম সাখাওয়াত শাকিব নিলয় বলেন, সৃষ্টির অমূল্য দান হল গাছ, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফ মাহমুদ বলেন, গাছ না থাকা, আমাদের শিকড় না থাকার মতো, গাছ আমাদের আত্মার সাথে জড়িত। এটি কেবল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং একটি পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগ। আমাদের দায়িত্ব শহীদদের আত্মত্যাগের মূল্য বোঝা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে তাদের দেখানো পথে হাঁটা।
এসময় রসায়ন ডিপার্টমেন্টের মোহাম্মদ মাসউদ হোসেন শিপন বলেন, গাছ হলো পৃথিবীর ফুসফুস, যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন ও ইতিহাস-সচেতন করতে চাই।
পেট্রোলিয়ম এবং মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এ উদ্যোগের মাধ্যমে ‘জিয়া ট্রি’ রোপণ কেবল শহীদদের স্মরণেই নয়, বরং পরিবেশ সুরক্ষার উদ্দেশ্যেও একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। ‘জিয়া ট্রি’ তার প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও কীটনাশক বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিবেশের উপকারে আসে। প্রতিটি রোপণকৃত গাছগুলো শহরের পরিবেশকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শহীদদের স্মৃতি রক্ষার এক স্থায়ী প্রতীক হিসেবে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।
এই উদ্যোগে আরও অংশগ্রহণ করেছেন কাজী জোনায়েদ (পিএসএস), নাইম মোরসালিন (সফটওয়্যার), আহাদ রহমান (গণিত),মিঠু সরকার (সফটওয়্যার), হাছিবুর রহমান (পিএসএস), মাহির আসিফ (বিবিএ), এস এম সাখাওয়াত শাকিব নিলয় (রসায়ন), রাহাত হোসেন (ইংরেজি), মোহাম্মাদ মাসউদ হোসেন শিপন (রসায়ন), প্রিন্স (সফটওয়্যার) আল আমিন (রসায়ন), খালিদ সাইফুল্লাহ (অ্যানথ্রোপোলজি), তানভির রহমান (অ্যানথ্রোপোলজি), সাজ্জাদ খান (বিবিএ), অন্তু ঘোফ (পিএসএস), ইফতেখার আহমেদ (পিএমই) মেহেদী হাসান (পিএমই), মারুফ সাকলাইন (বিবিএ), লিমন আহমেদ (অ্যানথ্রোপোলজি), জয় (সফটওয়্যার), মাসুদ আহমেদ (আইপিই), শরিফ মাহমুদ (পিএসএস), আহাদ তালুকদার (পিএসএস), নাসিমুল হুদা (পিএসএস) প্রমুখ।
নিমগাছ যেভাবে ‘জিয়া ট্রি’ হলো
যারা কখনো হজ বা ওমরাহ করতে সৌদি আরব গিয়েছেন, তারা জানেন আরাফাতের ময়দানে অনেক নিমগাছ আছে। সৌদি নাগরিকরা এই গাছকে বলে, ‘জিয়া ট্রি’। ১৯৭৭ সালে এই নামকরণ করা হয় বলে জানা গেছে। কারণ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে এই গাছগুলো উপহার হিসেবে সেখানে পাঠিয়েছিলেন, তারা সেটি ভোলেনি। সেখান থেকেই নিমগাছকে ‘জিয়া ট্রি’ হিসেবে ডাকা হয়।