২৮ অক্টোবর ২০২৪, ২০:৪৪

ছাত্রলীগের পদধারীদের গণহারে গ্রেপ্তার কখনোই সমর্থন করি না: সারজিস

সারজিস আলম  © ফাইল ফটো

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সূর্যসেন হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোয়াজ্জেম এইচ রাকিব সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল রবিবার (২৮ অক্টোবর) রাতে তাকে গ্রেপ্তারের খবরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রতিবাদ জানায়। তারা বলছেন, ছাত্রলীগে পদ ছিল, এমন নেতাদের গণহারে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি ঠিক হচ্ছে না। কারণ তাদের অনেকেই জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিল। একইসঙ্গে গণহত্যারও প্রতিবাদ করেছিল। মোয়াজ্জেম এইচ রাকিব তাদের একজন বলে এসময় দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। আজ সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাতে তিনি ফেসবুকের দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেফতার হবে, এটা কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না।

ফেসবুকের স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, একটা বিষয়ে স্পষ্ট দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই৷ বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহ্বান করছি৷ 

“১ জুলাই এর পূর্বে এবং ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল৷ এই আন্দোলনটা মেইনলি ১৫ তারিখ পর্যন্ত হলের ছেলেমেয়েরাই নিয়ে গিয়েছে ৷ 

তিনি লেখেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সর্ম্পকে ধারণা রাখেন তারা খুব ভালো করে জানেন এখানে হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হতো ৷ তাদের প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতে হতো ৷ গণরুমে থাকতে হতো ৷ সেজন্য হলে যারা থাকতো তাদের অধিকাংশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসব করতো ৷ 

“এবার আরেক প্রসঙ্গে আসি৷ হলের যে ছাত্রলীগের কমিটি হতো এখানে প্রায় ৮০% শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকতো কিছু কারণে- যেমন: ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়; যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়; অন্যরা যেন তার উপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয়৷ বাকি ২০% এর মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করতো, অনেকে ভিন্ন মতের লোকদের উপর অত্যাচার করতো, অনেকে ক্যান্ডিডেট হতো, অনেকে একটু ফাঁপর নিয়ে চলতো৷

তিনি লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এই প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০% স্টুডেন্ট ৷ তারা যেমন পোস্টেড ছিল তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেইস ছিল৷ তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই আদার্স নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং কারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি। এই পোস্টেড ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও এক হয়ে বের হয়ে আসার সাহস করতে পারতো না ৷ ওই গার্টস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলাই শো করতে পারে৷ হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিলো এবং আন্দোলনটাকে প্রাথমিকভাবে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি ৷

“১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন না আসলে ৫ আগস্ট কখনো সম্ভব হতো কিনা সে বিষয়ে ঢের সন্দেহ আছে ৷ 
এখন প্রশ্ন হচ্ছে হলের এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলবো কিনা ৷ উত্ত : ফেলবো না। যারা ১ জুলাই থেকে আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে  নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে৷ সত্য এটাই যে, এই আন্দোলন সফল না হলে এই ছেলেগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো৷ বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হতো৷”

সারজিস লিখেন, যে সিস্টেমের কারণে এদেরকে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট নিতে হয়েছে সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের সবাইকে দায়ী হতে হবে৷ কারণ আপনারা চুপ ছিলেন৷ হলে, ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাঁধা দেননি ৷ওরা যদি সেইফটি এন্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয় তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন৷ বরং যখনই সুযোগ হয়েছে ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে ৷আর তখনও আপনি নীরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন ৷

“এই ৮০% ছেলের কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তি হোক, কেউ যদি পরে কোনো অন্যায়ে জড়িত হয় তবে তদন্ত সাপেক্ষে তারও শাস্তি হোক৷ কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেফতার হবে এটা কখনোই সমর্থন করিনা৷ এটা হতে পারেনা ”

তিনি লেখেন, যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সকল বাঁধা উপেক্ষা করে আমার সাথে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে তারা আমার ভাই ৷ আমি তাদের পক্ষে থাকবো৷ সত্য সত্যই৷ কে কি বললো তাতে আমার কিছু যায় আসেনা৷