মনে আছে বিশ্বজিৎ, বিচার বাকি আবু বকরের— আসিফ নজরুলের স্ট্যাটাস
২০১২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে হত্যার শিকার দরজি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দে আবু বকর ছিদ্দিককে হত্যার ঘটনার বিচার বাকি জানিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বুধবার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্বজিৎ এবং আবুবকরে পৃথক দুটি ছবি শেয়ার করেছেন আসিফ নজরুল। বিশ্বজিৎ দাসের ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, মনে আছে বিশ্বজিৎ!; আর আবু বকর ছিদ্দিকের ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন, 'এই বিচার বাকি আছে। হৃদয়ে আবুবকর।'
আসিফ নজরুলের স্ট্যাটাস দুটিতে নেটিজেনরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একটি পক্ষ বলছে, ক্ষমতায় থাকাকালীন ছাত্রলীগ যে অপকর্ম করেছে, তার জন্য এই সংগঠন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সঠিক পদক্ষেপ। তবে আরেকটি পক্ষ বলছে, ছাত্রলীগের জন্ম স্বাধীনতার আগে। ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান ভোলার মতো নয়।
নিবির হাসান নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করে লিখেছেন, 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি।বাংলাদেশ নামক দেশ এর জন্মের ২৩ বছর আগে ছাত্রলীগের জন্ম। ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। ৫২ বছর সংগ্রামের ইতিহাস ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগের প্রথম অর্জন ৫২ এর ভাষা আন্দোলন।
কাজী তৌহিদ লিখেছেন, 'ছাত্রলীগ গত এক দশকে এদেশে ক্ষমতার দাপটে হত্যা, খুন, অপহরন, ধর্ষন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হল দখল,হলে নিরীহ চাত্রদের নির্যাতন, প্রশ্নপত্র ফাঁস সহ যাবতীয় অপরাধের হোতা। তাই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা ছিল এদেশের শান্তি কামী আপামোর জনতার দাবি। এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে সাধুবাদ জানাই।'
তথ্যমতে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে দরজি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিম্ন আদালত ২১ আসামির আট জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। গত রবিবার (০৬ আগস্ট) মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন এবং চার জনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন ও দু’জনকে খালাস দেন। এ ছাড়া,যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আরও দু’জনকে খালাস দেওয়া হয়। ওই মামলায় পলাতক ১১ জন আপিল করেনি।
অন্যদিকে ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে স্যার এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আবু বকর। টানা দুই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মেধাবী এই ছাত্র। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ১০ ছাত্রকে নামমাত্র সাময়িক বহিষ্কার করেই দায় সারে।
আবু বকর ছিদ্দিক হত্যা মামলায় ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শাহবাগ থানার দেওয়া অভিযোগপত্রে আটজনকে আসামি করা হয়েছিল। এর আগে ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের তখনকার হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মোল্যা গ্রুপের সংঘর্ষের সময় তিনি আহত হন। মৃত্যুর দুই মাস পর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকরের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তাতে প্রথম হয়েছিলেন তিনি।