ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিটি করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বন্ধ চেয়ে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিটি করে তাদের মতামত নেবে ঢাবি প্রশাসন। শিগগিরই এ কমিটিতে কারা থাকবে এবং কমিটির কার্যপরিধি নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপর তাদের মতামতের ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি কীভাবে চলবে তা নির্ধারণ করে দেবে প্রশাসন। তবে কমিটি গঠনের পরবর্তী সময় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির প্রেক্ষিতে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তারা যে সুপারিশ দেবে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পর্যালোচনা করে দলীয় রাজনীতি থাকবে কিনা সেটি নির্ধারণ করবে।
জানা গেছে, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ও অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামদের মতো বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে। তারা ক্যাম্পাসের সকল অংশীজনদের মতামত ও বক্তব্য নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির বিষয়ে সুপারিশ দেবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে তাদের এই সুপারিশ পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এই কমিটি গঠনের পর ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির কোনো ধরনের কার্যক্রম চালানো যাবে না বলে জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এসময়ে রাজনীতি বন্ধ রাখতে হবে। তবে ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ কিংবা ক্লাবভিত্তিক যে কার্যক্রম সেটা তার মধ্যে পড়বে না।
জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিন্ডিকেটের সেই জরুরি সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “রাজনীতির বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্যরা মতামত দিয়েছেন। সেগুলো পর্যালোচনা করে শিগগিরই একটি সারসংক্ষেপ বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থীই কোনো দলীয় ছাত্র রাজনীতি না চাওয়ার কারণ হিসেবে পূর্বের গণরুম ও গেস্টরুম কালচার, টর্চার সেল, জোরপূর্বক রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করানোকেই দায়ী করছেন।গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে চালানো ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক কার্যক্রম বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিমত’ শীর্ষক ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটির এক গবেষণা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে দলীয় ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ চাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই চান মাত্র শূন্য দশমিক দুই শতাংশ শিক্ষার্থী। এর সংস্কার চান ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র রাজনীতির কোনো গুরুত্ব নেই বলে মনে করেন।