০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২১:০৯

ঢাকা কলেজের হলে শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন ছাত্রদলের

বাম দিক থেকে শিহাব, রাহাত, সালাউদ্দিন এবং অর্নব  © সংগৃহীত

আচরণ ভঙ্গের অভিযোগ এনে ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন হলের এক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা থেকে ভোর রাত ৪টা পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে জানা গেছে। কলেজ ছাত্রদলের সহ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবিব হাওলাদার শিহাব ওরফে আশফাকুর রহমান শিহাব ও তার সহযোগীরা এ ঘটনায় জড়িত বলে জানান ভুক্তভোগী ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মারুফ রেজা।  

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শিহাবের সাথে ছিলেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল রাহাত ওরফে আফজাল হোসাইন, অর্থনীতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান অর্নব।

এ ঘটনার পর মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, আমি মারুফ রেজা ঢাকা কলেজের ইংলিশ বিভাগের ২য় বর্ষের (২১-২২ সেশনের) ছাত্র। গতকাল রাতে আমার জীবনের সব থেকে জঘন্য কালো অধ্যায়ের রচনা হয়। ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন হলে ৩০১ নাম্বার রুমে গতকাল রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আমার ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন। 

চারজনের নাম উল্লেখ করে তিনি লেখেন, সালাউদ্দিন ভাই রুমে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছিল। এক পর্যায়ে আমি সালাউদ্দিন ভাইকে বলি, ভাইয়া গালাগালি কইরেন না ছোট ভাই পড়ছে পাশে। এরপরই আমার দিকে তেড়ে আসে মারার জন্য। এক পর্যায়ে আমার রুমের রামিম ভাই এবং ৪ তলার রাহাত ভাই ঠেকাতে আসলে তাদেরও গালাগালি করে। এরপর রাহাত ভাই নর্থ হল থেকে সিয়াব ভাইকে ডেকে এনে রুম আটকে দেয় এরপর রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আমার উপর নির্যাতন করে এবং এক পর্যায়ে আমি স্যারদের বলার জন্য ফোন দিতে গেলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। 

তিনি আর লেখেন, আমি সেসময় কি করবো বুঝতে পারছিলাম না তখন ডিপার্টমেন্ট বন্ধু সিআর ইমরানকে কল দিয়ে বাঁচাতে বললে সে রাত সাড়ে ৪টাই আমার হলে নিচে আসে তারপর আমি বের হয়। তাকে সব বলি সে আমাকে কলেজ গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যাই তারপর সেখান থেকে বড় ভাইয়ের ঢাবির হলে ঢুকে পড়ি। তারপর সকালে বাড়ি চলে আছি।

নির্যাতনের সময়কার ২৪ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ থেকে শোনা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে গালাগালি ও হেনস্তা করা হচ্ছে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। তরে কে বাঁচাবে? তোর কে বড় ভাই আছে? তাকে ফোন দে ইত্যাদি হুমকি দেওয়া হয়। এরপরই বেশ কয়েকটি আঘাতের শব্দ শোনা যায়। পুরো সময়জুড়েই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়। 

নির্যাতনের সাথে জড়িত আল রাহাত বলেন, নির্যাতনের বিষয় না এটা, তার সাথে কথা বলা যাকে বলে আরকি। একটা ছেলে বেয়াদবি করে সরিও বলেনি, উলটো সিনিয়র নিয়ে আসার হুমকি দিয়েছে। আমার রুমে আসা গেস্টের সাথে যদি সে বেয়াদবি করে ক্ষমা না চায় তাহলে রুমে থাকা ঠিক হবে কিনা? মারধর তো আর করিনি, গালাগালিই। কি রকম সরি না বলে যখন চুপ করে থাকে, চোখ পাকায় সেক্ষেত্রে রাগ হবে এটাই স্বাভাবিক। 

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিজেদেরই কর্মী আখ্যা দিয়ে বলে, গতকালও তিনি আমাদের সাথেই প্রোগ্রাম করেছে। এটা নিজেদের নিজেদের ভেতরেই ঘটনা, আমরা নিজেরাই দেখছি ইনশাআল্লাহ। 

তিনি বলেন, তিনি যেভাবে টর্চারের ঘটনা লিখেছে ব্যাপারটা আসলে তেমন না। অন্য সংগঠন থেকে ওকে প্রলোভন দেখিয়ে এগুলো করানো হয়েছে। এরপরও আমরা দুই পক্ষের সাথে কথা বলে যদি অভিযুক্তকে দোষী হিসেবে পাই অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।

নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে দক্ষিণায়ন হলের প্রভোস্ট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি অবশ্যই শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। শুরুতে যদি আমি কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ না করি তাহলে এটা অন্য রুমেও ঘটতে পারে। এমন পদক্ষেপ নিবো যেন ভবিষ্যতে শিক্ষা হয়ে থাকে। 

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারুফের সাথে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি বাড়িতে চলে গেছে। যেহেতু তিনি নাই এজন্য পদক্ষেপ নিতে পারছি না। আমি অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলেছি। হলের শৃঙ্খলাবিরোধী যেকোনো বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবো।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কে এম ইলিয়াস বলেন, হল প্রভোস্টরা এ বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা চাই-না এমন কোনো ক্ষুদ্র ঘটনাও এখানে ঘটুক।