বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক: ববিতে ছাত্রদল সম্পাদক
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাকে অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। আজ মঙ্গলবার দুপুরে (১ অক্টোবর) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ববি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি দিবেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের বিষয়ে যারা সোচ্চার নয়, তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ একইসাথে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের খুব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি থাকতে পারেনি। আপনি জানেন যে, এসময় একটি লেজুড়ভিত্তিক ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী ও দখলদারিত্ব চালিয়েছে। তাদের দোসররা জুলাই ও আগস্টে নির্বিচারে গুলি করে মানুষকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এখন একটি স্বাভাবিক সময় এসেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলমান রয়েছে, যারা ভবিষ্যতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে এবং যারা অতীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছে তাদেরকে একটি সাংগঠনিক স্ট্রাকচার নিয়ে আসবো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল জেলা, মহানগর, কলেজগুলোসহ সকল ইউনিটে আমরা সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজাবো এবং সাংগঠনিক স্ট্রাকচার নিয়ে আসবো। এ বিষয়ে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে এবং সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করে আমরা দ্রুতই এই কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশাবাদী।
জানা যায়, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সাথে তাল মিলিয়ে ইতিবাচক রাজনীতির সূচনা করতে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের থেকে জনমত গঠন করছে ছাত্রদল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে মতামত গ্রহণ করছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির। ববিতেও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ও ছাত্ররাজনীতি সংস্কার সম্পর্কে মতামত জানতে চান তিনি।
এ সম্পর্কে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আমরা ছাত্ররাজনীতি শুভ সূচনা করতে চাই। ছাত্রসমাজ থেকে যে ছাত্র রাজনীতি বিনির্মানের দাবী উঠেছে সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। গত ১৬-১৭ বছর ছাত্রলীগের যে লেজুড়ভিত্তিক ও দখলদারি রাজনীতি করেছে তার বিপরীতে আমরা একটি শিক্ষার্থী বান্ধব ইতিবাচক রাজনীতি করতে চাই। এতোদিন গেস্টরুম কালচার, পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলা, জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া, ছিনতাই, ধর্ষণ চলেছে রাজনীতির নামে। এরকম রাজনীতি ছাত্রসমাজ চিরতরে প্রত্যাখ্যান করেছে। কীভাবে আমরা ইতিবাচক রাজনীতি করতে পারি সে ব্যাপারে আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করছি। আমরা বিশ্বাস করি আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি ইতিবাচক রাজনীতির রূপরেখা আমাদের দিবে। আমরা আশাবাদী শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে থাকবে।
ছাত্রলীগের রাজনীতি করা নিয়ে তিনি বলেন, গত জুলাই ও আগস্ট এই দুই মাসে গণহত্যা ও নির্যাতনের পরে ছাত্ররা ছাত্রলীগের রাজনীতি মেনে কি না এটাই এখানে আসল প্রশ্ন। দীর্ঘ সময় ধরে তারা ক্যাম্পাসে হল দখল, গেস্টরুমসহ নানা অনৈতিক কাজ করছে। স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে এই দুই মাসে আমরা চেষ্টা করছি ছাত্রকল্যাণ রাজনীতি করার এবং ছাত্রলীগ যেন আবার কোনো ক্যাম্পাসে না ফিরতে না পারে সেই চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এ সিদ্ধান্ত নেয় স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরমধ্যে রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ও।