দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় মাদ্রাসাছাত্র শামিম
নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে এক চোখের আলো হারানো ভোলার লালমোহন থানার গজারিয়া ইউনিয়নের মো. শামিমের। রাজধানীর শ্যামলীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অপারেশন করে চোখ থেকে গুলি বের করা হলেও দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি তার। উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে কিছু জানাননি চিকিৎসকরা, সরকারি সহায়তা পাননি। এই পরিস্থিতিতে কী করবেন, কিছুই জানেন না আলিম ২য় বর্ষের এই শিক্ষার্থী।
গত ১৮ জুলাই ঢাকায় ভোলা থেকে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। ওই দিন তার বাম চোখে সহ শরীরে তার পাঁচটি গুলি লাগে। পরে তাকে নেওয়া হয় মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। আন্দোলন করার কারণে কোনো হাসপাতোলেই ঠাঁই হয়নি তার।
পরদিন তাকে এক অপরিচিত সিএনজি চালকের সহযোগিতায় শ্যামলীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা নেয়ার পরপরেই মোহাম্মদপুরের বাসায় চলে আসেন তিনি।
আরও পড়ুন: আন্দোলনে নাতিকে খুঁজতে গিয়ে গুলিতে হারালেন চোখ
শামিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যখন সারা দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে তখন এলাকার আওয়ামী লীগের নেতারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে না যাওয়ার হুমকি দেয়। তখন আমরা এলাকার কয়েকজন মিলে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ঢাকার মোহাম্মদপুরে আসি। আমরা প্রায় প্রতিদিনই আন্দোলন করেছি মোহাম্মদপুর এলাকায়।
গত ১৮ জুলাই যখন পুলিশ এলোপাতারি গুলি ছুড়তে থাকে তখন আমার বাম চোখে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মোট পাঁচটি গুলি লাগে। চোখের অপারেশনের আগে ডাক্তার বলেছিল হয়ত চোখের আলো ফিরে পেতেও পারেন না ও পেতে পারেন।
গুলি লাগার পর ২৪ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করেন তিনি। আন্দোলনে তীব্র হলে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীরা যখন ম্যাসগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আটকের চেষ্টা শুরু করে তখনই তিনি পালিয়ে গ্রামের বাড়ি ভোলায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
শামিম বলেন, বাড়িতে যাওয়ার সময় আমাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা পেয়ে বাড়িতে আসতে পেরেছিলাম। বাড়িতে এসেও জায়গা হয়নি আমার এলাকার বিভিন্ন নেতারা খুঁজতে আসতো। বেশির ভাগ সময়ই লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পর আমি বাড়িতে আসি।
আরও পড়ুন: আন্দোলনে নিহত রিকশাচালক ইসমাইলের ছেলের পড়াশোনা বন্ধ
চোখের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ২৪ আগস্ট আমি আবার হাসপাতালে ভর্তি হই এরপর ১ সেপ্টেম্বর আমার অপারেশন হয়। অপারেশনের পরও আমি ৭ দিন ভর্তি ছিলাম। মাঝে আমি চোখে গোলা গোলা দেখতাম কিন্তু এখন একবারেই দেখি না। ডাক্তার বলেছেন, এক মাসের একটা ফলোআপে থাকতে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না । উন্নত চিকিৎসার বিষয়ও জানাননি তারা।