আহতদের পানি দিতে গিয়ে নিজেই শহিদ, ডাক্তার না থাকায় গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে দাফন
জুলাই–আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে সংঘাত–সহিংসতায় নিহত হয় হাজারের অধিক। তেমনি একজন কুষ্টিয়ার আলমগীর শেখ। নিজের কর্মস্থলের সামনে আহত আন্দোলনকারীদের পানি পান করাতে গিয়ে তিনি গুলিতে নিহত হন। মৃত্যুর পূর্বে কোনো ডাক্তার না থাকায় গুলিবিদ্ধ দেহ নিয়ে দাফন করতে হয়।
মো. আলমগীর শেখ (৩৬) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা গ্রামের মুদি দোকানি মো. ইজারুল ও বৃদ্ধা আলেয়া খাতুনের বড় সন্তান। দুই ভাইয়ের মধ্যে আলমগীর বড়। তার স্ত্রী রিমা খাতুন (৩০) দুই শিশু সন্তান মেয়ে তুলি খাতুন (১১) ও ছেলে আব্দুল আওলাদ (৭) কে নিয়ে সীমাহীন অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।
আলমগীরের পরিবার জানান, ১৯ জুলাই রামপুরা এলাকায় নিজ কর্মস্থল বেসরকারি ওষুধ কোম্পানী হেলথ কেয়ারে গিয়েছিলেন আলমগীর। সে সময় হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোঁড়া হচ্ছিল। অফিসের কাছে গুলিবিদ্ধ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়েন।
তখন আলমগীর পানির বোতল নিয়ে আহতদের পানি পান করাতে যান। সে সময় তিনি নিজেও হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া গুলিতে আহত হন। আলমগীরের শরীরে তিনটি গুলি লাগে। স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় আলমগীরের।
জানা যায়, সংসারের হাল ধরতে গাড়ি চালানো শিখে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় পাড়ি জমান মো. আলমগীর শেখ। ঢাকার রামপুরা এলাকার বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি হেলথ কেয়ারের গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অভাব মেটাতে পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং যাত্রী পরিবহন করতেন।
সরেজমিনে আলমগীরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মৃত্যুর দুই মাস পার হলেও শোকে মুহ্যমান আলমগীরের পরিবার। কেউ আসলেই ছেলের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন আলমগীরের মা। তার মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে দুটি পরিবার।
আলমগীরের শোকাতুর মা আলেয়া খাতুন বলেন, আমার ছেলে খুবই ধার্মিক ছিলো। ছেলেটা গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষকে পানি খাওয়ানোর জন্য গিয়েছিলো। সেই সময় হেলিকপ্টার থেকে পুলিশ গুলি করে। আমার ছেলের গায়ে তিনটি গুলি লাগে। তারপর বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলে মারা গেছে। আমার ছেলেটা এখন নাই। ওর বউ, বাচ্চাদের দেখবে কে? আমার বাড়ি ছাড়া অন্য কোন জায়গা জমি নেই। এখন আমি এদের নিয়ে চলবো কি করে? আলেয়া খাতুন নিজের পরিবার ও আলমগীরের স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
আলমগীরের স্ত্রী রিমা খাতুন বলেন, “আমার স্বামীর চাকরির টাকায় ভালোভাবে সংসার চলতো না। সে জন্য অফিস ছুটির পর ও পাঠাওয়ে মোটরসাইকেল চালাতো। এখনতো আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো। আমি এখন শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, ছেলে-মেয়ে নিয়ে কি করে চলবো বুঝতে পারছি না। সরকার একটু সাহায্য সহযোগিতা করলে পরিবার নিয়ে চলতে পারতাম।”
উল্লেখ্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রত্যেক পরিবার প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা এবং আহত প্রত্যেককে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এছাড়াও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে সরকার।
সূত্র বাসস