১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩

কী কবিতা ছিল আন্দোলনে নিহত জাফরের রক্তাক্ত শার্টের পকেটে

আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্র জনতা  © সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শেখ ফাহমিন জাফর (১৮) টঙ্গী সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ ও ১৭ জুলাই মীর মুগ্ধের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি তিনি। নিজের মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে ১৮ জুলাই মায়ের অনুমতিতে যোগ দেন আন্দোলনে।

শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা জানিয়েছেন, আন্দোলনে যাওয়ার সময় ফাহমিন তার মায়ের অনুমতি নিয়ে মায়ের কাছে আরজি করে বলেন, ‘আমি যদি আন্দোলনে মারা যায় আমাকে, তাহলে যেন তার লাশ ঘরে না এনে সোজা গণভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত লাশ গণভবন থেকে যেন নিয়ে আসা না হয়।’

এ কথা বলে উত্তরা আজমপুর সুপার মার্কেট এলাকায় সংঘটিত হওয়া আন্দোলনে যোগ দেন জাফর। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয়। ঢাকার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে পাওয়া যায় তার মরদেহ। দাফনের জন্য মরদেহ উত্তরা স্থানীয় মসজিদে গোসলের নিয়ে গেলে বাধা দেয় মসজিদ কমিটি।

আন্দোলনে শহীদ জাফরের শার্টের পকেটে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লেখা দু’টি কবিতা পাওয়া যায়। একটি কবিতা ‘সিঁড়ি’।

আজ স্বাধীনতার পর, কেন স্বাধীন দেশের ছাত্রের রক্ত ঝরলো?

কেন তাদের প্রাণ গেল? কেমন স্বাধীনতা পেলাম?

যে কথা বলার স্বাধীনতা নেই।

কেমন স্বাধীনতা পেলাম?

যেখানে আন্দোলনে গুলি ছোড়ে!

স্বাধীনতার মূল্য কোথায়?

পরাধীন রাষ্ট্রে ভাই রফিক, জব্বারের রক্ত

স্বাধীন রাষ্ট্রে ভাই সাঈদ, রাফির রক্ত

তাহলে কী স্বাধীনতা পাইনি

স্বাধীনতা পেলাম তো রক্ত কেন দিলাম?

রক্ত দিলাম তোর স্বাধীন দেশে

তাই রক্ত দিয়ে আবার স্বাধীনতা আনবো

আরও পড়ুন: আন্দেলোনে নিহত সুজন: একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

আরেকটি কবিতা 

হয়তো মানুষ হতে চাই...

বিষ মতন ওষুধ চাই, বেঁচে থাকতে দোয়া চাই

মৃত আত্মায় প্রাণ চাই জীবিত দেহে কাফন চাই

মহাকালের ভুল পথে সুপথ চাই সুপথে চলতে পা চাই

মস্তিষ্কে বিবেক চাই বিবেক,

ভালো-মন্দ বিচার করতে চাই

মরে যেয়েও বেঁচে আছি আমি...

মরে যেয়েও বেঁচে আছি আমি

বিশ্রী থেকে শুশ্রী হতে চাই সর্বোপরি মানুষ হতে চাই।

আরও পড়ুন: জবি শিক্ষকদের বাসে করে ক্যাম্পাসে গেলেন নতুন উপাচার্য

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন শহীদ জাফরের মা কাজী মাখমিন শিল্পী। অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উত্তরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।